
আমাদের মৃত্যু কোথায়, কীভাবে এবং কখন হবে, তা কি আমরা জানি? তাকদির বা ভাগ্য আল্লাহর এক বিস্ময়কর রহস্য, যা মানুষের জ্ঞানের ঊর্ধ্বে।
ভূমিকা: তাকদিরের সেই অমোঘ রহস্য
সম্প্রতি জনপ্রিয় ইসলামি চিন্তাবিদ আল্লামা ফরিদ উদ্দিন আল মোবারক (ফেনী) তাঁর এক হৃদয়স্পর্শী Waz Mahfil-এ এমনই এক শিক্ষণীয় এবং অন্তর কাঁপানো ইসলামিক ঘটনা বর্ণনা করেছেন। এই ইসলামিক আলোচনা বা bangla waz টি হযরত ইদ্রিস (আঃ) এবং মৃত্যুর ফেরেশতা হযরত আজরাইল (আঃ)-কে নিয়ে, যা আমাদের জীবনের শেষ পরিণতি সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে শেখায়।
%20%E0%A6%93%20%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%AE%E0%A6%B9%20%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF.093Z.webp)
দ্বিগুণ সওয়াবের সুসংবাদ ও হায়াত বাড়ানোর আকুতি
একদিন আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে একটি বিশেষ সুসংবাদ দিয়ে হযরত ইদ্রিস (আঃ) এর কাছে পাঠালেন। জিবরাঈল (আঃ) এসে বললেন, "হে আল্লাহর নবী! আল্লাহ আপনার জন্য একটি সুসংবাদ পাঠিয়েছেন। এখন থেকে আপনি যতদিন হায়াত পাবেন, আপনার প্রতিটি আমলের সওয়াব দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে।"
এই অভাবনীয় সুসংবাদ শুনে হযরত ইদ্রিস (আঃ) এর মনে পার্থিব কোনো লোভ নয়, বরং 'সওয়াবের লোভ' জাগ্রত হলো। তিনি ভাবলেন, হায়াত যদি আরও দীর্ঘ হতো, তবে এই দ্বিগুণ সওয়াবের সুযোগ আরও বেশি করে কাজে লাগানো যেত। নেক আমলের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে তিনি জিবরাঈল (আঃ)-কে অনুরোধ করলেন, "ভাই জিবরাঈল! দয়া করে আল্লাহর কাছে আমার হায়াত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করুন।"
চতুর্থ আসমানে এক বিস্ময়কর যাত্রা
জিবরাঈল (আঃ) জানালেন যে হায়াত বাড়ানো বা কমানোর দায়িত্ব তাঁর নয়; এটি মৃত্যুর ফেরেশতা হযরত আজরাইল (আঃ) এর কাজ। তখন ইদ্রিস (আঃ) আজরাইল (আঃ) এর সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাঁর এই আকুতি দেখে জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে নিজের ডানায় তুলে নিয়ে যান চতুর্থ আসমানে, যেখানে হযরত আজরাইল (আঃ) এর দপ্তর অবস্থিত।
%20%E0%A6%93%20%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%AE%E0%A6%B9%20%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%201.403Z.webp)
আজরাইল (আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ ও তাকদিরের উন্মোচন
জিবরাঈল (আঃ) হযরত ইদ্রিস (আঃ)-কে দপ্তরের বাইরে অপেক্ষা করতে বলে ভেতরে প্রবেশ করলেন এবং ইদ্রিস (আঃ) এর অনুরোধের কথা জানালেন। সব শুনে হযরত আজরাইল (আঃ) বিস্ময়ের সাথে "আলহামদুলিল্লাহ" বলে উঠলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, "ইদ্রিস (আঃ) এখন কোথায়?" জিবরাঈল (আঃ) উত্তর দিলেন, "তিনি আপনার দপ্তরের বাইরেই অপেক্ষা করছেন।"
তখন আজরাইল (আঃ) এক বিস্ময়কর রহস্য উন্মোচন করেন। তিনি বলেন, "প্রতিদিন সকালে আল্লাহ পাক আমার হাতে একটি তালিকা দেন, যেখানে লেখা থাকে কার রুহ কখন এবং কোথায় কবজ করতে হবে। আজকের তালিকায় নবী ইদ্রিস (আঃ) এর নামও ছিল, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর স্থান হিসেবে লেখা ছিল 'চতুর্থ আসমান'। আমি চিন্তায় ছিলাম যে, তিনি তো পৃথিবীতে আছেন, তাহলে চতুর্থ আসমানে তাঁর রুহ কীভাবে কবজ করব? এখন আপনি যখন তাঁকে নিয়ে নিজেই এখানে উপস্থিত হয়েছেন, তখন আমার বুঝে এসেছে যে আল্লাহ পাক এভাবেই তাঁর তাকদিরকে পূর্ণ করেন।"
এই ঘটনাই রাসূল (ﷺ) এর হাদিসকে প্রমাণ করে: "আল্লাহ যখন কোনো ব্যক্তির মৃত্যু কোনো নির্দিষ্ট স্থানে লিখে রাখেন, তখন তিনি সেই স্থানে যাওয়ার জন্য কোনো না কোনো প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন।"
মূল আলোচনাটি শুনুন (ভিডিও)
ঘটনা থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা
- মৃত্যু ও কবরের স্থান পূর্বনির্ধারিত: মানুষের মৃত্যু কোথায় এবং দাফন কোথায় হবে, তা মায়ের গর্ভে থাকতেই নির্ধারিত হয়ে যায়।
- আল্লাহর পরিকল্পনাই চূড়ান্ত: আমাদের জীবন-মৃত্যুর প্রতিটি বিষয় আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে, আমাদের উচিত বর্তমান সময়কে আল্লাহর ইবাদতে কাজে লাগানো।
আমাদের করণীয়
যেহেতু মৃত্যু আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, আমাদের একমাত্র করণীয় হলো আল্লাহর কাছে একটি সুন্দর ও সম্মানজনক মৃত্যুর জন্য দোয়া করা। বক্তা তাঁর পীর, হযরত মাওলানা শাহ জমির উদ্দিন নানুপুরী (রহঃ)-এর কথা স্মরণ করে বলেন, তিনি প্রতিটি মোনাজাতে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে বলতেন: "হে আল্লাহ! বেইজ্জতির মরণ থেকে পানাহ চাই, ইজ্জতের মরণ ভিক্ষা চাই।"
%20%E0%A6%93%20%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%AE%E0%A6%B9%20%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%203.715Z.webp)
উপসংহার
এই islamic video বা আলোচনাটি আমাদের তাকদিরের প্রতি বিশ্বাসকে আরও মজবুত করে। এটি একটি শক্তিশালী islamic reminder যে, আমাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই। আসুন, আমরা আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর সন্তুষ্ট থাকি, ইসলামের আলোয় জীবন গড়ি এবং একটি উত্তম বিদায়ের জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
সম্পর্কিত আলোচনা পড়ুন
সাহাবী কারা এবং তাঁদের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লামা ফরিদ উদ্দিন আল মোবারক (ফেনী) এর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাটি পড়ুন।
পোস্টটি পড়ুন