
একজন ভালো বন্ধু যেমন জান্নাতের পথে নিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু হতে পারে পরকালের ধ্বংসের কারণ। চলুন, বন্ধুত্বের ইসলামি নির্দেশনা জেনে নিই।
ভূমিকা: ইসলামে বন্ধুর গুরুত্ব
মানুষ সামাজিক জীব। জীবনে চলতে গেলে আমাদের সঙ্গী প্রয়োজন। ইসলামে বন্ধুর গুরুত্ব (importance of friends in Islam) অপরিসীম, কারণ এটি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর একটি। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্তের দুনিয়া ও আখেরাতে প্রভাব রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ (Alhamdulillah), এই সুন্দর ইসলাম ধর্ম আমাদের বন্ধু নির্বাচনের মতো বিষয়েও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে।
একজন ভালো বন্ধু (a good friend) যেমন আপনাকে জান্নাতের পথে এগিয়ে নিতে পারে, ঠিক তেমনি একজন অসৎ বন্ধুর কারণে পরকালের জীবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আজকের এই পোস্টে আমরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানব, কীভাবে একজন বন্ধু আখেরাতের বন্ধু (friend in the hereafter) হিসেবে আমাদের নাজাতের ওসিলা হতে পারে।

কুরআনের সতর্কবাণী: বন্ধু যখন শত্রু
বন্ধুত্বের সম্পর্ক পরকালে কেমন হবে, সে বিষয়ে আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সতর্ক করেছেন। সূরা আয-যুখরুফের ৬৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন:
"সেদিন মুত্তাকিরা ছাড়া সব বন্ধু একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে।"
এই আয়াতটি নিজেই একটি শক্তিশালী ইসলামিক স্ট্যাটাস হওয়ার যোগ্যতা রাখে, যা আমাদের ভাবতে বাধ্য করে।
বন্ধুর প্রভাবে বদলে যায় জীবন
আমাদের জীবনে বন্ধুদের প্রভাব অপরিসীম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: "মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে প্রভাবিত হয়। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকের উচিত, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে, তা ভেবে দেখা।" এ কারণেই ইসলামে সৎ সঙ্গ অবলম্বনের ওপর এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সাহাবীদের বন্ধুত্ব: সর্বোত্তম উদাহরণ
Islamic history (ইসলামের ইতিহাস) পর্যালোচনা করলে আমরা দেখি, সাহাবীগণ ছিলেন বন্ধুত্বের সর্বোত্তম উদাহরণ। নবীজি (সাঃ)-এর বন্ধুত্বের পরশে এসে সাধারণ মানুষগুলো হয়ে উঠেছিলেন ইতিহাসের একেকজন মহীরুহ। যেমন আবু বকর (রাঃ) ‘সিদ্দিক’, উমর (রাঃ) ‘ফারুক’, উসমান (রাঃ) ‘জিননুরাইন’ এবং আলী (রাঃ) ‘আসাদুল্লাহ’ উপাধি লাভ করেন।
বন্ধুত্ব নিয়ে শিক্ষণীয় ইসলামিক গল্প
বন্ধুত্বের গভীর প্রভাব বোঝাতে গিয়ে সম্প্রতি একটি আলোচনায় **মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সাহেব (দারুলহুদা, সিলেট)** দুটি অসাধারণ শিক্ষণীয় ঘটনা বর্ণনা করেছেন। এই bangla waz থেকে নেওয়া গল্প দুটি আমাদের চিন্তার জগৎকে নাড়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
গল্প-১: আল্লাহর দলের কর্মী
এক বিখ্যাত মুহাদ্দিস বলেন, "আজ ৬৮ বছর ধরে আমি নিজের টাকায় একটা সুতাও কিনিনি।" এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বহু বছর আগে এক বুজুর্গ ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, "ওহে যুবক, তুমি কার দল করো?" তিনি উত্তর দেন, "আমি আল্লাহর দল করি।" তখন সেই বুজুর্গ বলেন, "মনে রেখো, কর্মী যে দলের হয়, সেই দলই তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়।" মুহাদ্দিস বলেন, "সেই দিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার যখন যা প্রয়োজন হয়েছে, আল্লাহ গায়েব থেকে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ!"
মূল আলোচনাটি শুনুন (ভিডিও)
গল্প-২: ‘মটকাওয়ালা’ ও পরকালের নাজাত
আরেকটি শিক্ষণীয় গল্পে আমরা জানতে পারি ‘মটকাওয়ালা’ নামে পরিচিত এক দানশীল ব্যক্তির কথা, যিনি মাদ্রাসার ছাত্রদের দুধ পান করাতেন। ছাত্ররা এই নামে ডাকায় তিনি মনে কষ্ট পেলেও, এক স্বপ্নের মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারেন যে এই পরিচয়ের কারণেই তিনি পরকালে নাজাত পেতে পারেন। এই islamic story আমাদের শেখায়, মানুষের উপাধি নয়, বরং তার আমলই আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

শেষ কথা: বন্ধু হোক জান্নাতের পাথেয়
দুনিয়ার বন্ধুত্ব ক্ষণিকের জন্য নয়। হাশরের দিনে একজন নেককার বন্ধু হয়তো আল্লাহর কাছে আপনার জন্য সুপারিশ করতে পারে। তাই আসুন, আমরা এমন মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ি যারা আমাদের জান্নাতের পথের সঙ্গী হবেন। আমাদের এমন বন্ধু নির্বাচন করা উচিত:
- যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।
- যাদের সান্নিধ্যে গেলে ঈমান মজবুত হয় এবং যারা আপনাকে গুনাহের পরিবর্তে কোরআন শুনতে উৎসাহিত করে।
- যারা দুনিয়া ও আখিরাত—উভয় জগতেই কল্যাণকর।
এই শিক্ষণীয় islamic video-টি দেখুন এবং সম্পর্কিত আরেকটি ব্লগ পড়ুন:
আবু যর গিফারী (রাঃ) এর গোপন আমল