আল্লাহর বিচার দিবসের কথা চিন্তা করলে কি আপনার অন্তর কেঁপে ওঠে? হাশরের ময়দান হবে এমন এক জায়গা, যেখানে সামান্য শস্যদানা পরিমাণ আমলও আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে। সেদিন ইনসাফের পাল্লায় কারো ওপর এক বিন্দুও জুলুম করা হবে না। কিন্তু একবার ভাবুন তো, পাহাড় পরিমাণ নেকি নিয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর পরেও যদি আপনাকে নিঃস্ব হয়ে জাহান্নামে যেতে হয়, এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে?
সম্প্রতি এমনই এক হৃদয় বিদারক আলোচনার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের অন্তর কাঁপিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা ইসমাইল হোসেন বুখারী। তাঁর প্রতিটি new waz বা islamic waz আমাদের দুনিয়ার জীবনকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। এই আলোচনাটি আমাদের জন্য একটি বিরাট সতর্কবার্তা। চলুন, ismail bukhari kashiyani সাহেবের সেই waz mahfil থেকে আলোচনার গভীরে প্রবেশ করি।
হাশরের ময়দানের সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য
কল্পনা করুন, আপনি পাহাড় পরিমাণ নেক আমল নিয়ে জান্নাতে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। ঠিক তখনই একজন এসে আল্লাহর কাছে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে। সে বলবে, "হে আল্লাহ! এই ব্যক্তি দুনিয়ায় আমার হক নষ্ট করেছে, আমার ওপর জুলুম করেছে। আমি আজ তার বিচার চাই।"
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেদিন মিথ্যা বলার কোনো সুযোগই রাখবেন না। আপনি স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। তখন আল্লাহ বলবেন, "যাও, তার হক আদায় করে দাও।" কিন্তু সেদিন তো টাকা-পয়সা বা সম্পদ দিয়ে হক আদায়ের কোনো উপায় থাকবে না। হক আদায়ের একমাত্র মাধ্যম হবে আপনার নেক আমল।

অভিযোগকারী বলবে, "আল্লাহ! আমার যেটা প্রয়োজন, সেটা ওর কাছে আছে। ওর নেকি থেকে আমার হক আদায় করে দিন।" তখন আপনার পাহাড় পরিমাণ নেকি থেকে তাকে নেকি দেওয়া হবে। একজন নয়, দুজন নয়, একের পর এক পাওনাদার আসতে থাকবে। যারা মানুষের হক নষ্ট করে, তারা তো কেবল একজনকে কষ্ট দেয় না। কাউকে গালি দিয়ে, কাউকে ঠকিয়ে, আবার কাউকে জুলুম করে—বিভিন্ন উপায়ে তারা মানুষের হক নষ্ট করে।
তাদের হক আদায় করতে করতে আপনার সমস্ত নেকি একসময় শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু পাওনাদারের সারি শেষ হবে না। তখন বাকি অভিযোগকারীরা বলবে, "আল্লাহ, ওর তো নেকি শেষ, আমাদের গুনাহগুলো ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে আমাদের হক আদায় করে দিন।"
ফলাফল কী হবে? পাহাড় পরিমাণ নেকির মালিক হয়েও আপনি সেদিন পাহাড় পরিমাণ গুনাহর বোঝা মাথায় নিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবেন। ismail hussain bukhari waz থেকে আমরা জানতে পারি, এটাই হলো কিয়ামতের দিনের সবচেয়ে বড় দেউলিয়াপনা।
নিজস্ব প্রতিফলন: আজ আমরা ছোটখাটো বিষয়ে বা ক্ষমতার দাপটে অন্যের মনে কষ্ট দিতে বা কারো সম্পদ ভোগ করতে দ্বিধা করি না। কিন্তু এই আলোচনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, দুনিয়ার এই সামান্য লাভ বা অহংকার পরকালে আমাদের ধ্বংসের কারণ হবে।
সেদিন কেউ কাউকে ছাড় দেবে না: আল্লাহর হক বনাম বান্দার হক
আপনি হয়তো ভাবছেন, দুনিয়ায় সন্তানের হক নষ্ট করেছি, সন্তান তো বাবা হিসেবে আমাকে মাফ করে দেবে। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে সেই দিনের অবস্থা বর্ণনা করেছেন:
يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ * وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ * وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ
"সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাইয়ের কাছ থেকে, এবং তার মাতা ও পিতার কাছ থেকে, আর তার স্ত্রী ও সন্তানদের কাছ থেকে।" (সূরা আবাসা, আয়াত: ৩৪-৩৬)

সেদিন প্রত্যেকেই ‘নাফসি নাফসি’ করতে থাকবে। তাই মনে রাখবেন, আল্লাহর হক, যেমন—নামাজ, রোজা যদি কেউ নষ্ট করে, আল্লাহ তাঁর অসীম দয়ায় তা মাফ করে দিতেও পারেন। কিন্তু বান্দার হক আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করবেন না, যতক্ষণ না সেই বান্দা আপনাকে ক্ষমা করে। আর হাশরের ময়দান-এ কেউ কাউকে ক্ষমা করবে না। এই ইসমাইল হোসেন বুখারী ওয়াজ আমাদের জন্য এক কঠিন বাস্তবতা।
পারিবারিক জীবনে হকের গুরুত্ব: স্বামী ও স্ত্রীর অধিকার
বান্দার হকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পারিবারিক হক। মাওলানা ইসমাইল হোসেন বুখারী তাঁর bukhari waz-এ এই বিষয়টির ওপর খুব জোর দিয়েছেন।
✅ স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব:
- মোহরানা পরিশোধ: মোহর স্ত্রীর অন্যতম প্রধান হক। ছলে-বলে-কৌশলে এই হক নষ্ট করা যাবে না। এটি পরিশোধের নিয়ত রাখতে হবে এবং স্ত্রীর সাথে আলোচনার মাধ্যমে তা আদায় করতে হবে।
- উত্তম বাসস্থান ও ভরণপোষণ: স্ত্রীর জন্য তার পারিবারিক পরিবেশের সাথে মানানসই বাসস্থানের ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। তার ভরণপোষণ ও পর্দার ব্যবস্থা করাও স্বামীর ওপর ফরজ।
- সদাচরণ ও পরামর্শ: স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার সাথে পরামর্শ করা একটি সুখী সংসারের চাবিকাঠি। এতে পারস্পরিক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায়।
- গোপনীয়তা রক্ষা: স্বামী-স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় বাইরে প্রকাশ করা নির্লজ্জতা এবং মারাত্মক গুনাহ।

- আনুগত্য ও সম্মান: শরীয়তসম্মত সকল বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্তব্য। যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে।
- সম্পদ ও সম্মানের হেফাজত: স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার সম্পদ, সম্মান এবং নিজের সতীত্বের হেফাজত করা স্ত্রীর অন্যতম দায়িত্ব।
- রাগ ও জেদ পরিহার: স্বামী বাইরে থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরলে তার সাথে জেদ বা হঠকারিতা না করে শান্ত ও কোমল আচরণ করা উচিত। একটি ছোট বিষয়ে রাগারাগি থেকে শয়তান সংসারে আগুন লাগিয়ে দেয়।
নিজস্ব প্রতিফলন: বর্তমান সময়ে ডিভোর্সের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। এর অন্যতম কারণ হলো স্বামী-স্ত্রী একে অপরের অধিকার সম্পর্কে অসচেতনতা এবং সামান্য বিষয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলা। এই আলোচনা আমাদের শিখিয়েছে যে, ভালোবাসা ও ছাড় দেওয়ার মাধ্যমেই একটি সংসার টিকে থাকে।
উপসংহার: বুদ্ধিমান তিনিই, যিনি দুনিয়াতেই হিসাব চুকিয়ে দেন
এই islamic video বা bangla waz গুলো বিভিন্ন famous islamic channel-এ প্রচারের উদ্দেশ্য হলো আমাদের সচেতন করা। বুদ্ধিমান তো সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের কঠিন দিন আসার আগেই দুনিয়াতে মানুষের হক আদায় করে দেয়।
মূল আলোচনাটি শুনুন (ভিডিও)
আসুন, মাওলানা ইসমাইল বুখারী কািশয়ানী-এর মতো আলেমদের আলোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের জীবনকে সাজাই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বান্দার হক আদায়ের তৌফিক দান করুন এবং হাশরের ময়দানের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
করণীয় তালিকা (Actionable Checklist):
বান্দার হক নষ্ট করা থেকে বাঁচতে এবং পরকালে মুক্তির জন্য আজই এই কাজগুলো শুরু করুন:
- ক্ষমা প্রার্থনা: যদি কখনো কাউকে কথায় বা কাজে কষ্ট দিয়ে থাকেন, অহংকার না করে তার কাছে সরাসরি ক্ষমা চেয়ে নিন।
- ঋণ ও আমানত পরিশোধ: কারো কাছ থেকে ঋণ বা ধার নিলে তা যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করুন। আমানতের খেয়ানত করবেন না।
- সম্পর্ক ঠিক করুন: পরিবারের বা আত্মীয়-স্বজনের কারো সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে থাকলে, নিজে উদ্যোগী হয়ে তা ঠিক করে ফেলুন।
- অন্যের জন্য দোয়া: যার হক নষ্ট করেছেন বলে মনে হয়, তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন এবং সম্ভব হলে তার নামে কিছু দান-সদকা করুন।
সাধারণ জিজ্ঞাসাসমূহ (FAQ):
১. আল্লাহর হক এবং বান্দার হকের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: আল্লাহর হক হলো ইবাদত, যেমন—নামাজ, রোজা, হজ। এগুলো পালন না করলে আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করতে পারেন। বান্দার হক হলো মানুষের পারস্পরিক অধিকার, যেমন—ঋণ, আমানত, সম্মান। এগুলো சம்பந்தিত ব্যক্তি ক্ষমা না করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।
২. আমি যদি কারো হক নষ্ট করে থাকি এবং তাকে খুঁজে না পাই, তাহলে কী করব?
উত্তর: যদি পাওনাদারকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব না হয়, তবে তার পক্ষ থেকে সমপরিমাণ অর্থ দান করে দিন এবং আল্লাহর কাছে তার জন্য মাগফিরাত কামনা করুন।
৩. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কে বেশি হকের অধিকারী?
উত্তর: ইসলামে উভয়েরই অধিকার সুনির্দিষ্ট করা আছে। একে অপরের প্রতি নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করাই মূল বিষয়। তবে পারিবারিক ব্যবস্থাপনার প্রধান হিসেবে স্বামীর দায়িত্ব বেশি।
সম্পর্কিত আলোচনা পড়ুন
আলমে বরযখ বা কবরের জীবন কেমন হবে, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
পোস্টটি পড়ুন