ইমাম আবু হানিফা কি মাত্র ১৭টি হাদিস জানতেন? মুফতি মুজিবুর রহমানের কণ্ঠে এক ঐতিহাসিক জবাব

ইমাম আবু হানিফা কি মাত্র ১৭টি হাদিস জানতেন? মুফতি মুজিবুর রহমানের কণ্ঠে এক ঐতিহাসিক জবাব

ভূমিকা: এক ভিত্তিহীন অভিযোগের ব্যবচ্ছেদ

ইসলামের ইতিহাসে ইমামে আজম আবু হানিফা (রহঃ) এক কিংবদন্তিতুল্য নাম, যার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা মুসলিম উম্মাহকে আলোকিত করে রেখেছে। কিন্তু সম্প্রতি কিছু মহল থেকে প্রায়ই একটি অভিযোগ শোনা যায় যে, ইমাম আবু হানিফা নাকি হাদিস জানতেন না, তিনি মাত্র ১৭টি হাদিস জানতেন এবং বাকি সব মাসআলা নিজের আকল বা যুক্তি দিয়ে বলতেন। এই ভিত্তিহীন অভিযোগের জবাবে সম্প্রতি এক New Bangla Waz Mahfil অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত আলেম মুফতি মুজিবুর রহমান এক জ্ঞানগর্ভ আলোচনা পেশ করেছেন, যা প্রতিটি মুসলমানের অন্তরকে আলোকিত করবে।

এই Bangla waz video-তে তিনি তাঁর সিলেটি ভাষায় ঐতিহাসিক দলিল দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এর জীবনী ছিল ইলম, আমল ও তাকওয়ার এক বিরল সমন্বয়। চলুন, তাঁর আলোচনার আলোকে সেই সত্য উন্মোচন করা যাক।

১. হাদিস শাস্ত্রের মহীরুহের সাক্ষ্য: কে ছিলেন শ্রেষ্ঠ আলেম?

সত্যিকারের আলেমকে চিনতে হলে আলেমের কাছেই যেতে হয়। হাদিস শাস্ত্রের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র, ‘আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদিস’ আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ), যার ৭০ হাজারেরও বেশি হাদিস মুখস্থ ছিল, তিনি যখন ইলম অর্জনের জন্য কুফা নগরীতে এলেন, তখন তিনি সেখানকার সকল উলামায়ে কেরামকে একত্র করে জিজ্ঞেস করলেন, "আপনাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম কে?"

কুফার সকল আলেম একবাক্যে যার নাম বলেছিলেন, তিনি হলেন imam abu hanifa। শুধু তাই নয়, আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) যখন জানতে চাইলেন—

  • ইলম চর্চায় সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত কে?
  • সবচেয়ে বড় ইবাদতকারী কে?
  • এবং সবচেয়ে বড় পরহেজগার কে?

আশ্চর্যজনকভাবে, প্রতিটি প্রশ্নের জবাবেই কুফার উলামায়ে কেরাম একবাক্যে ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-এর নাম বলেন। এই ঘটনাটিই প্রমাণ করে যে, ইমাম আবু হানিফা রহঃ শুধু বড় আলেমই ছিলেন না, বরং আমল ও তাকওয়াতেও তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।


  হাদিস শাস্ত্রের মহীরুহের সাক্ষ্য: কে ছিলেন শ্রেষ্ঠ আলেম
আমাদের জন্য শিক্ষা: আজকের সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আমরা সহজেই যেকোনো ব্যক্তিকে ‘বড় আলেম’ বা ‘ছোট আলেম’ বলে আখ্যা দেই। কিন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারকের এই ঘটনা আমাদের শেখায় যে, সত্যিকারের জ্ঞানীর মর্যাদা কেবল অন্য জ্ঞানীরাই বুঝতে পারেন।

২. ইমাম বুখারীর উস্তাদের চোখে ইমাম আবু হানিফা: এক সোনালী পরম্পরা

এই mojar waz আলোচনায় আরও একটি শক্তিশালী দলিল পেশ করা হয়। ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর অন্যতম প্রবীণ উস্তাদ ছিলেন মক্কী ইবনে ইবরাহিম (রহঃ)। মজার বিষয় হলো, এই মক্কী ইবনে ইবরাহিম (রহঃ) ছিলেন ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-এর ছাত্র। অর্থাৎ, ইমাম বুখারীর দাদা উস্তাদ হলেন ইমাম আবু হানিফা। সেই মক্কী ইবনে ইবরাহিম (রহঃ) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা দিয়েছেন, "আবু হানিফা তাঁর জামানার সবচেয়ে বড় আলেম ছিলেন।"

যার ছাত্রের ছাত্র ইমাম বুখারী, তাঁর হাদিসের জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলা কতটা হাস্যকর, তা সহজেই অনুমান করাযায়। এই Bangla Waz New আলোচনাটি আমাদের সেই ঐতিহাসিক সত্যকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।

৩. জ্ঞান ও আমলের অবিশ্বাস্য সমন্বয়: এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি

একজন আলেমকে অনুসরণ করার আগে দুটি বিষয় দেখতে হয়: তাঁর জ্ঞান এবং তাঁর আমল। Mufti Mujibur Rahman বলেন, ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এই উভয় ক্ষেত্রেই ছিলেন অতুলনীয়।

  • ইবাদত: তিনি তাঁর ৭০ বছরের জীবনে ৫৫টি হজ করেছেন এবং একটানা ৪০ বছর এশার ওযু দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন।
  • কুরআন তেলাওয়াত: একটি ঐতিহাসিক সত্য যে, তিনি কাবা ঘরের ভেতরে দুই রাকাত নফল নামাজে পুরো কুরআন শরিফ খতম করেছিলেন।
  জ্ঞান ও আমলের অবিশ্বাস্য সমন্বয় এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি

নামাজ শেষে যখন তিনি আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে বলছিলেন যে, তিনি ইবাদতের হক আদায় করতে পারেননি, তখন গায়েব থেকে আওয়াজ আসে, "হে আবু হানিফা, তুমি ইবাদতের হক আদায় করেছ। আমি তোমাকে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তোমার অনুসারীদের ক্ষমা করে দিলাম।"

৪. হাদিস বনাম সুন্নাহ: যে সূক্ষ্ম পার্থক্যটি জানা জরুরি

আজকাল মসজিদে যে ফিতনা তৈরি করা হয়, তার কারণ হলো হাদিস ও সুন্নাহর মধ্যকার পার্থক্য না বোঝা। mufti muzibur rahman তাঁর সিলেটি ভাষায় এই বয়ানে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের হাদিস মানতে বলেননি, বরং তাঁর ‘সুন্নাহ’ মানতে বলেছেন।

  • হাদিস: রাসূল (সাঃ) এর প্রতিটি কথা, কাজ এবং সমর্থনকে হাদিস বলে। এর মধ্যে কিছু আমল আছে যা পরবর্তীতে তিনি করেননি বা যা মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে।
  • সুন্নাহ: রাসূল (সাঃ) এর সেই সকল কাজ বা কথা, যার উপর তিনি মৃত্যু পর্যন্ত অটল ছিলেন এবং যা উম্মতের জন্য অনুসরণীয়।

যারা কিছু বিচ্ছিন্ন বা মানসুখ হাদিস দেখিয়ে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তাদের থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) লক্ষ লক্ষ হাদিস থেকে যাচাই-বাছাই করে উম্মতের জন্য পালনীয় সুন্নাহভিত্তিক মাসআলা বের করে দিয়ে গেছেন।

...فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ...

অনুবাদ: "...তোমরা আমার সুন্নাহ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরবে, তা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে..." (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৬৭৬)

এক নজরে ইমাম আবু হানিফার মর্যাদা

🎓 শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি

হাদিসগুরু আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) এর চোখে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ আলেম, আবেদ ও পরহেজগার।

🔗 সোনালী পরম্পরা

তাঁর ছাত্র মক্কী ইবনে ইবরাহিম (রহঃ) ছিলেন ইমাম বুখারীর (রহঃ) অন্যতম প্রধান উস্তাদ।

🕌 অকল্পনীয় ইবাদত

একটানা ৪০ বছর এশার ওযুতে ফজর আদায় এবং এক রাতে ২ রাকাতে কুরআন খতম।

🌍 বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা

বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মুসলমান তাঁর মাযহাবের অনুসারী।

🧠 সুন্নাহর গভীর জ্ঞান

লক্ষ লক্ষ হাদিস থেকে যাচাই করে উম্মতের জন্য পালনীয় ‘সুন্নাহ’ভিত্তিক জীবনব্যবস্থা প্রদান করেছেন।

                                     মূল আলোচনাটি ভিডিওতে শুনুন

সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

প্রশ্ন ১: ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) সম্পর্কে "মাত্র ১৭টি হাদিস জানতেন" কথাটি কি সত্যি?
উত্তর: না, এটি একটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ। হাদিস শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ ইমামগণই তাঁকে তাঁদের সময়ের সেরা আলেম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাঁর ছাত্রের ছাত্র ছিলেন ইমাম বুখারীর মতো ব্যক্তিত্ব, যা তাঁর জ্ঞানের গভীরতা প্রমাণ করে।
প্রশ্ন ২: মাযহাব অনুসরণ করা কি জরুরি?
উত্তর: সাধারণ মানুষের জন্য কুরআন ও লক্ষ লক্ষ হাদিস থেকে সরাসরি মাসআলা বের করা অসম্ভব। মাযহাব হলো কুরআন ও সুন্নাহর উপর চলার একটি সুশৃঙ্খল ও সহজ পথ, যা ইমাম আবু হানিফার মতো মুজতাহিদ ইমামগণ তৈরি করে দিয়েছেন। তাই মাযহাব অনুসরণ করা মানেই কুরআন-সুন্নাহর সঠিক অনুসরণ।
প্রশ্ন ৩: মুফতি মুজিবুর রহমান সাহেবের এমন আলোচনা আরও কোথায় পাওয়া যাবে?
উত্তর: ইউটিউব এবং বিভিন্ন ইসলামিক প্ল্যাটফর্মে "Mufti Mujibur Rahman" বা "সিলেটি ওয়াজ" লিখে সার্চ করলে তাঁর অসংখ্য জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ও ওয়াজ মাহফিল পাওয়া যাবে।

উপসংহার: কেন বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমান তাঁর অনুসারী?

আজকের bangla waz mahfil -গুলোতে মাযহাব নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। কিন্তু মোল্লা আলী কারী (রহঃ)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, বিশ্বের তিন ভাগের দুই ভাগ মুসলমান ইমাম আবু হানিফার মাযহাব অনুসরণ করে। আল্লাহর রাসূল (সা) বড় জামাতকে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

পরিশেষে, মুফতি মুজিবুর রহমান এর এই আলোচনা আমাদের জন্য একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেয়। ইমাম আবু হানিফা (রঃ) ছিলেন ইলমের সাগর এবং আমলের পাহাড়। তাঁর হাদিসের জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলা অজ্ঞতার শামিল। যারা আজ নতুন নতুন ফিতনা তৈরি করে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়, তাদের থেকে সতর্ক থাকা এবং মুফতি মুজিবুর রহমান এর মতো হক্কানী উলামায়ে কেরামের নির্দেশনা মেনে চলাই হলো নাজাতের পথ। এমন আরও islamic waz থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।


সম্পর্কিত আলোচনা পড়ুন

ঈমানের অদৃশ্য বর্ম: যে পাপে মুমিনের অন্তর থেকে নূর কেড়ে নেয়

পোস্টটি পড়ুন

আমাদের ফলো করে পাশে থাকুন

নতুন পোস্ট প্রকাশের সাথে সাথে আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন।

ফলো করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ

নবীনতর পূর্বতন