জীবন পরিবর্তনের মাস্টারক্লাস: মুফতি মুশাহিদ কাসেমীর যে আলোচনা বদলে দিতে পারে আপনার ভাগ্য

জীবন পরিবর্তনের মাস্টারক্লাস: মুফতি মুশাহিদ কাসেমীর যে আলোচনা বদলে দিতে পারে আপনার ভাগ্য

ভূমিকা

আমরা সবাই জীবনে এক ইতিবাচক পরিবর্তন চাই। একটি সুন্দর, সফল ও অর্থবহ মুসলিম জীবন গড়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অন্তহীন। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, আমাদের কোন অভ্যাসগুলো আমাদের অজান্তেই সাফল্যের পথ থেকে সরিয়ে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে? আর কোন গুণগুলোই বা পারে আমাদের মুক্তির দিশা দিতে?

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামিক স্কলার মুফতি মুশাহিদ কাসেমী এক হৃদয় স্পর্শী ওয়াজ মাহফিলে এই গুরুত্বপূর্ণ জীবন পরিবর্তনের কথা তুলে ধরেছেন। তার এই New bangla waz আমাদের ইসলামী চিন্তা জগতে নতুন করে ভাবনার খোরাক জোগায়। আল্লাহর হাবিব (সা.)-এর বর্ণিত ধ্বংস ও মুক্তির সেই পথগুলো নিয়েই আজকের এই আলোচনা, যা আপনার জীবনকে নতুনভাবে সাজাতে সাহায্য করবে।

যে ৩টি অভ্যাস জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়

মুফতি মুশাহিদ আলী কাসেমী তার আলোচনায় মানুষের ধ্বংসের জন্য দায়ী তিনটি ভয়াবহ বদঅভ্যাসের কথা উল্লেখ করেছেন। এই বিষয়গুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এতটাই জড়িয়ে আছে যে, আমরা হয়তো এগুলোকে আলাদাভাবে খেয়ালও করি না।

১. সর্বগ্রাসী স্বার্থপরতা

ধ্বংসের কারণগুলোর মধ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে মারাত্মক হলো স্বার্থপরতা। Mufti Mushahid Qasemi বলেন, স্বার্থপরতা এমন এক মানসিক রোগ যা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই নষ্ট করে দেয়। স্বার্থপর মানুষ কখনো চূড়ান্তভাবে সফল হতে পারে না। এই একটি বদভ্যাস থেকে আরও অনেক বড় বড় গুনাহর জন্ম হয়। যেমন:

  • জুলুম: স্বার্থপর ব্যক্তি নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যের ওপর অত্যাচার বা জুলুম করতে দ্বিধা করে না। সে যোগ্য ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয় না এবং নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলে নির্দ্বিধায় সত্যকে অস্বীকার করে।
  • আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা: স্বার্থের সংঘাতে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। বিশেষ করে বোনের প্রাপ্য সম্পত্তি বা ফারায়েজ না দিয়ে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা, যা আজকাল সমাজে অহরহ ঘটছে এবং একটি মারাত্মক গুনাহ।
  • মিথ্যা বলা: নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য একজন স্বার্থপর মানুষ অবলীলায় মিথ্যা কথা বলে। কদমে কদমে মিথ্যা বলা তার অভ্যাসে পরিণত হয়, যা সকল পাপের দরজা খুলে দেয়।

রাসূল (সা.) বলেছেন, পূর্ববর্তী জাতিগুলো ধ্বংস হয়েছিল এই স্বার্থপরতা এবং স্বজনপ্রীতির কারণে। তাদের মধ্যে প্রভাবশালী কেউ অপরাধ করলে শাস্তি পেত না, কিন্তু দুর্বল কেউ একই অপরাধ করলে কঠোর শাস্তি ভোগ করত। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে এতটাই কঠোর ছিলেন যে তিনি বলেছিলেন, "আল্লাহর কসম, আমার কন্যা ফাতেমাও যদি চুরি করে, আমি তার হাত কেটে দেব।" (সহীহ বুখারী, হাদিস নং: ৬৭৮৮)

২. প্রবৃত্তির লাগামহীন অনুসরণ

দ্বিতীয় যে অভ্যাসটি মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, তা হলো নিজের নফস বা প্রবৃত্তির পূজা করা। মানুষের মন প্রতিনিয়ত তাকে খারাপ কাজের দিকে ডাকে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন:

إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ

"নিশ্চয়ই মানুষের নফস মন্দ কাজের প্রতি নির্দেশ দিয়ে থাকে।" (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৩)

এই New islamic waz -এ Mufti Mushahid Qasemi বলেন, যে ব্যক্তি তার মনের লাগামহীন ইচ্ছার অনুসরণ করে, সে হালাল-হারামের পার্থক্য ভুলে যায়। তার পুরোটা দিন কাটে কেবল পেটের চাহিদা মেটানো আর হারাম যৌনচারের চিন্তায়। যে ব্যক্তি শুধু খাওয়া-দাওয়া আর কুচিন্তায় দিন কাটায়, সে দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে পারে না।

৩. নিজের মতকে শ্রেষ্ঠ ভাবা

তৃতীয় ধ্বংসাত্মক অভ্যাসটি হলো নিজের রায় বা মতকে সবচেয়ে উত্তম এবং চূড়ান্ত মনে করা। যখন একজন ব্যক্তি মনে করে যে তার সিদ্ধান্তই সেরা, তখন সে অন্যের সঠিক পরামর্শকেও উপেক্ষা করে। Mufti Mushahid Qasemi বলেন, এই অহংকারী মানসিকতার কারণেই একটি সংগঠন ভেঙে একাধিক হয়, এমন কি মসজিদের কমিটিতেও বিভেদ তৈরি হয়। অন্যের সঠিক মতামতকে মূল্যায়ন না করে শুধু নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার এই প্রবণতা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্যই অত্যন্ত ক্ষতিকর।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিফলন

আজকের ডিজিটাল যুগে এই তিনটি অভ্যাস আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘লাইক’ ও ‘কমেন্টের’ নেশা আমাদের স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক করে তুলছে। অনলাইন জগতে লাগামহীন কনটেন্ট আমাদের প্রবৃত্তির পূজারী বানাচ্ছে। আর কমেন্ট বক্সে নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অন্যের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন যেন এক সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই ধ্বংসাত্মক অভ্যাসগুলো থেকে বেঁচে থাকা এখন আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং।

  বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিফলন

যে ৩টি গুণ আপনাকে মুক্তির পথ দেখাবে

ধ্বংসের কারণগুলো জানার পর মুক্তির পথ চেনা অত্যন্ত জরুরি। মুফতি মুশাহিদ ক্বাসেমী সাহেব তার এই অসাধারণ Bangla waz -এ সেই তিনটি গুণের কথা বলেছেন যা মানুষকে মুক্তি দেয় এবং জীবনকে সুন্দর করে।

১. সর্বাবস্থায় ন্যায়বিচার করা

মুক্তির প্রথম ও প্রধান পথ হলো খুশি এবং রাগ, উভয় অবস্থাতেই ইনসাফ বা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আমরা প্রায়ই রাগের মাথায় এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিই যা জুলুমের পর্যায়ে পড়ে, আবার অতিরিক্ত খুশিতে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিই। কিন্তু প্রকৃত মুক্তির পথ হলো, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, ইনসাফের পাল্লাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখা।

২. সচ্ছল ও অসচ্ছলতায় মধ্যপন্থা অবলম্বন

দ্বিতীয় মুক্তির পথ হলো জীবনের সকল ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। হাতে টাকা-পয়সা বেশি থাকলেও যেমন অপচয় করা যাবে না, তেমনি অভাবের সময়ও হতাশ না হয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্যধারণ করতে হবে। উভয় অবস্থায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ মুসলিম জীবন যাপন করাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য।

৩. গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করা

মুক্তির তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো অন্তরে আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া রাখা। শুধু মানুষ যখন দেখছে তখন নয়, বরং যখন কেউ দেখছে না, সেই নির্জনেও আল্লাহকে ভয় করে চলা। যার অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে, সে কখনো ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হতে পারে না এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। আল্লাহ বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ

"হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা যে, সে আগামীকালের জন্য কী প্রেরণ করেছে।" (সূরা হাশর, আয়াত: ১৮)

মূল আলোচনাটি ভিডিওতে শুনুন

বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিফলন

এই মুক্তির গুণগুলো অর্জন করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। কর্মক্ষেত্রে বা পরিবারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় রাগ বা অনুরাগের বশবর্তী না হয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আমাদের আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে। আর ডিজিটাল প্রাইভেসি যখন প্রায় শূন্যের কোঠায়, তখন নির্জনে আল্লাহকে ভয় করার অভ্যাস আমাদের অনলাইন এবং অফলাইন উভয় জগতেই চরিত্রকে রক্ষা করতে পারে।

একনজরে জীবন পরিবর্তনের পথ

  • 🌪️
    ধ্বংসের পথ:১. স্বার্থপরতা: যা জুলুম, সম্পর্কচ্ছেদ ও মিথ্যার জন্ম দেয়।
  • 🌪️
    ধ্বংসের পথ:২. প্রবৃত্তির অনুসরণ: যা মানুষকে হারাম কাজে লিপ্ত করে।
  • 🌪️
    ধ্বংসের পথ:৩. অহংকার: নিজের মতকে শ্রেষ্ঠ ভাবা, যা সমাজে বিভেদ তৈরি করে।
  • 💡
    মুক্তির পথ:১. ন্যায়বিচার: রাগ ও খুশি উভয় অবস্থায় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।
  • 💡
    মুক্তির পথ:২. মধ্যপন্থা: সচ্ছলতা ও অভাব উভয় অবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা করা।
  • 💡
    মুক্তির পথ:৩. আল্লাহভীতি: গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করে চলা।

শেষ কথা

মুফতি মুশাহিদ কাসেমীর এই আলোচনাটি নিঃসন্দেহে একটি অমূল্য পাথেয়। এই ধরনের bd waz আমাদের আত্মশুদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমরা যদি ধ্বংসের কারণগুলো থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখে মুক্তির পথগুলো অবলম্বন করতে পারি, তবেই আমাদের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আসা সম্ভব।

আপনার জন্য করণীয়

  • আত্ম-সমালোচনা করুন: প্রতিদিন অন্তত পাঁচ মিনিট নিজের কাজগুলো নিয়ে ভাবুন। আপনার কোনো কথায় বা কাজে কি স্বার্থপরতা প্রকাশ পেয়েছে?
  • প্রবৃত্তিকে চ্যালেঞ্জ করুন: যখনই কোনো মন্দ কাজের ইচ্ছা হবে, সাথে সাথে আল্লাহর কথা স্মরণ করে বলুন, "আমি আল্লাহকে ভয় করি।"
  • অন্যের মত শুনুন: কোনো আলোচনায় নিজের মত দেওয়ার আগে অন্যের দৃষ্টিকোণ বোঝার চেষ্টা করুন। এতে আপনার সিদ্ধান্ত আরও সঠিক হবে।
  • ছোট ছোট ন্যায়বিচার করুন: পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বা বন্ধুদের মাঝে ছোটখাটো বিষয়েও ন্যায়সঙ্গত আচরণ করুন। এই অভ্যাস আপনাকে বড় বিষয়েও ইনসাফ করতে সাহায্য করবে।

সম্পর্কিত আরো একটি পোষ্ট পড়ুন

যে আমলে সাহাবী দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেলেন

পোস্টটি পড়ুন

সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

প্রশ্ন ১: আমি কীভাবে বুঝব যে আমি স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি?

উত্তর: যখন আপনি নিজের সুবিধার জন্য অন্যের অধিকার বা অনুভূতিকে উপেক্ষা করতে শুরু করবেন, যখন পারিবারিক বা সামাজিক দায়িত্বে আপনার অনীহা আসবে এবং যখন যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধু নিজের প্রাপ্তি নিয়ে ভাববেন, তখন বুঝতে হবে আপনি স্বার্থপরতার দিকে ঝুঁকছেন।

প্রশ্ন ২: নিজের জন্য ভালো কিছু চাওয়া কি স্বার্থপরতা?

উত্তর: না, নিজের জন্য কল্যাণ চাওয়া বা নিজের যত্ন নেওয়া স্বার্থপরতা নয়। এটি ইসলামে উৎসাহিত। কিন্তু যখন নিজের কল্যাণ নিশ্চিত করতে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করা হয় বা অন্যের অধিকার নষ্ট করা হয়, তখনই তা নিন্দনীয় স্বার্থপরতায় পরিণত হয়।

প্রশ্ন ৩: মুফতি মুশাহিদ কাসেমীর এমন আলোচনা আরও কোথায় পাওয়া যাবে?

উত্তর: ইউটিউব এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে যেমন আমাদের Famous islamic channel এ Mufti Mushahid Qasemi সাহেবের অনেক waz mahfil এর ভিডিও আপলোড করা হয়। আপনি "Mufti Mushahid Qasemi new waz" লিখে সার্চ করলেও সহজেই হুজুরের আলোচনাগুলো খুঁজে পাবেন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ধ্বংসের পথ থেকে বাঁচিয়ে মুক্তির পথে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।

আমাদের ফলো করে পাশে থাকুন

নতুন পোস্ট প্রকাশের সাথে সাথে আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন।

ফলো করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ

নবীনতর পূর্বতন