
ইসলাম শান্তি ও মর্যাদার ধর্ম। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছেন, কিন্তু সকল মানুষের মর্যাদা এক সমান রাখেননি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বক্তা সিরাজুল ইসলাম দারুলহুদা তাঁর এক মনোমুগ্ধকর আলোচনায় মানুষের মর্যাদা নির্ধারণের ঐশী মাপকাঠি তুলে ধরেছেন। এই New Waz অনুষ্ঠানে তিনি তার স্বভাবসুলভ Bangla Waz এ ঈমান ও কোরআনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির জন্য এক অমূল্য পাথেয়।
মর্যাদার প্রথম সোপান: দৌলতে ঈমান
এই চমৎকার New Bangla Waz শুরু হয় সৃষ্টির এক গভীর রহস্য দিয়ে। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর প্রায় ৮০০ কোটি মানুষকে এক স্তরে রাখেননি। মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সাহেব বলেন, আল্লাহ মানুষের মধ্যে থেকে একটি বিশেষ দলকে বাছাই করে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। এই বাছাইয়ের প্রথম এবং প্রধান মাপকাঠি হলো ঈমান।
যাদেরকে আল্লাহ ঈমানের দৌলত দান করেছেন, তারাই পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যে প্রথম ধাপের সম্মানী ব্যক্তি। এটিই হলো মর্যাদার প্রথম আইডি কার্ড। এই islamic video থেকে আমরা জানতে পারি যে, ঈমানহীন জীবন অর্থহীন এবং আল্লাহর কাছে তার কোনো মূল্য নেই।
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
অনুবাদ: "প্রকৃত মু'মিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।" (সূরা আল-হুজুরাত: ১৫)
নিজস্ব প্রতিফলন:
আজকের পৃথিবীতে আমরা শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক অবস্থান বা পেশাগত পরিচয়ের মতো অনেক ‘আইডি কার্ড’ নিয়ে গর্ব করি। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, আল্লাহর কাছে আমাদের আসল পরিচয়পত্র কোনটি? সেই পরিচয়পত্র হলো ঈমান। পার্থিব পরিচয়গুলো একদিন মুছে যাবে, কিন্তু ঈমানের পরিচয় আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতে মর্যাদা দেবে।
ঈমানদারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যারা: কোরআনের ধারক ও বাহক
মর্যাদার স্তর এখানেই শেষ নয়। এই waz mahfil এ প্রখ্যাত এই সিলেটি বক্তা মাওলানা সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, আল্লাহ ঈমানদারদের মধ্য থেকেও আরেকটি দলকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। এই দ্বিতীয় পর্বের বাছাইয়ের মাপকাঠি হলো আসমানী জ্ঞান বা আল-কোরআন।
যাদেরকে আল্লাহ কোরআনের জ্ঞান দান করেছেন, যারা কোরআন ধারণ করে এবং এর আলোকে জীবন পরিচালনা করে, তারাই মুমিনদের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। কোরআন হলো সেই ঐশী চৌম্বক যা মানুষের অন্তর থেকে সকল পাপ ও কলুষতা দূর করে জীবনকে পবিত্র ও দামি করে তোলে। কোরআন যার জীবনে প্রবেশ করে, তার জীবন বদলে যায়।
يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ
অনুবাদ: "তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন।" (সূরা আল-মুজাদালা: ১১)
নিজস্ব প্রতিফলন:
আমরা প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়া, খবর বা বিনোদনের মাধ্যমে অসংখ্য তথ্য গ্রহণ করি। কিন্তু এর কতটুকু আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে? কোরআন হলো সেই আসমানী জ্ঞান, যা শুধু তথ্য দেয় না, বরং জীবনকে রূপান্তরিত করে। আসুন, প্রতিদিনের স্ক্রল করার সময় থেকে কিছুটা সময় বের করে কোরআনের জ্ঞান অর্জনে ব্যয় করি।
ঈমান ও কোরআনের মর্যাদার সারসংক্ষেপ
- 🎯 মর্যাদার ভিত্তি: মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয় আল্লাহর দেওয়া দুটি পরিচয়পত্রের মাধ্যমে।
- 💳 প্রথম পরিচয়পত্র: ‘ঈমান’, যা মানুষকে অন্য সকল সৃষ্টি থেকে আলাদা করে।
- 📖 সর্বোচ্চ পরিচয়পত্র: ‘কোরআনের জ্ঞান’, যা মু'মিনদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি।
- 🌟 রূপান্তরের শক্তি: কোরআন মানুষের জীবনকে পরিশুদ্ধ করে, যেমনটি হযরত ওমর (রাঃ)-এর জীবনে ঘটেছিল।
- ❤️ আখেরাতের প্রস্তুতি: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্যই প্রকৃত পাথেয়।
কোরআনের শক্তিতে বদলে যাওয়া জীবন: হযরত ওমর (রাঃ) এর উপাখ্যান
কোরআন কীভাবে একজন মানুষের জীবনকে বদলে দিতে পারে, তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হলেন আমিরুল মুমিনিন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)। Sirazul islam তাঁর আলোচনায় হযরত ওমরের (রাঃ) জীবনের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা তুলে ধরেন। যে ওমর একদিন নবীজির (সাঃ) মাথা মোবারক আনার জন্য তরবারি হাতে বেরিয়েছিলেন, কোরআনের কয়েকটি আয়াত শুনে সেই ওমরই ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেন।
তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর আর গোপনে ইসলামের দাওয়াত দিতে হয়নি। হযরত ওমর (রাঃ) এর মতো ব্যক্তিত্বের কারণেই ইসলাম প্রকাশ্যে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এমনকি খলিফা থাকাকালীন মসজিদে নববীর মিম্বরে খুতবা দেওয়ার সময় তাঁর আওয়াজ ১২০০ কিলোমিটার দূরের যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাপতি সারিয়ার (রাঃ) কাছে পৌঁছে গিয়েছিল, যা ছিল কোরআনের বরকতে আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ ক্ষমতা। এই new bangla waz থেকে এমন অসংখ্য অনুপ্রেরণামূলক ঘটনা জানা যায়।
আলেমদের মর্যাদা ও আখেরাতের প্রস্তুতি
যারা কোরআনের জ্ঞানে জ্ঞানী, অর্থাৎ আলেম, হাফেজ ও মুহাদ্দিস, তাদের মর্যাদা অপরিসীম। যতদিন পৃথিবীতে একজনও সত্যিকারের আলেম থাকবেন, ততদিন এই পৃথিবী টিকে থাকবে। তাদের কদমের বরকতে আল্লাহ কবরস্থানের আজাব পর্যন্ত মাফ করে দেন।
প্রকৃত বুদ্ধিমান তো সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়ার জীবনের পাশাপাশি আখেরাতের জন্যও প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এই Islamic waz থেকে আমরা শিখতে পারি যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসা হলো আখেরাতের শ্রেষ্ঠ প্রস্তুতি। যার সাথে যার মহব্বত, তার সাথেই তার হাশর হবে। তাই আল্লাহ ওয়ালাদের সাথে সম্পর্ক রাখা প্রতিটি Muslim এর জন্য জরুরি। বর্তমান সময়ের বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সাহেব সব সময় কোরআনের জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
মূল আলোচনাটি ভিডিওতে শুনুন
আমাদের দায়িত্ব ও আমানত
আলোচনার শেষে মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সাহেব বলেন, দ্বীনি প্রতিষ্ঠান বা মাদ্রাসাগুলো আমাদের কাছে আমানত। এই আমানত রক্ষা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। হযরত আবু বকর (রাঃ) যেমন যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন, তেমনি আমাদেরও দ্বীনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট হতে হবে।
এই বাংলা ওয়াজ টি শুধু একটি আলোচনাই নয়, বরং এটি আমাদের ঈমানকে জাগিয়ে তোলার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। আপনি যদি এমন আরও আলোচনা শুনতে চান, তবে আমাদের Famous islamic channel এ চোখ রাখতে পারেন।
করণীয় তালিকা: আজ থেকেই শুরু করুন
- কোরআন পাঠের অভ্যাস করুন: প্রতিদিন অন্তত একটি আয়াত অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ পড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। এর জন্য ভালো কোনো অ্যাপ বা তাফসির গ্রন্থের সাহায্য নিতে পারেন।
- ঈমানকে নবায়ন করুন: প্রতিদিন নিজেকে প্রশ্ন করুন, "আমার আজকের কাজগুলোর উদ্দেশ্য কি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি ছিল?" যদি না থাকে, তবে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চান।
- আলেমদের সাহচর্যে থাকুন: স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা কোনো বিশ্বস্ত আলেমের আলোচনা নিয়মিত শুনুন। তাদের সান্নিধ্যে থেকে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করুন, কারণ ভালো সামঞ্জস্যপূর্ণ আলোচনা ঈমানকে সতেজ রাখে।
- দ্বীনি প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন করুন: আপনার সময়, মেধা বা হালাল উপার্জন থেকে সামান্য অংশ দিয়ে নিকটস্থ কোনো মাদ্রাসা বা ইসলামি কেন্দ্রকে সাহায্য করুন। এটি একটি সদকায়ে জারিয়া।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
প্রশ্ন: ঈমান শক্তিশালী করার সবচেয়ে সহজ উপায় কী?
উত্তর: ঈমান বাড়ে ও কমে। একে শক্তিশালী করার সহজ উপায় হলো আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা, নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা (অর্থসহ), জিকির করা এবং সৎ সঙ্গে থাকা। পাশাপাশি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা ঈমানকে মজবুত করে।
প্রশ্ন: আমি আলেম নই, কোরআনের জ্ঞান কীভাবে আমার মর্যাদা বাড়াবে?
উত্তর: কোরআনের জ্ঞান অর্জন করা শুধু আলেমদের জন্য ফরজ নয়। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। আপনি যখন কোরআন থেকে জীবনের দিকনির্দেশনা নেবেন এবং সে অনুযায়ী আমল করবেন, তখন আপনার প্রজ্ঞা, চরিত্র ও কর্ম আল্লাহর কাছে প্রিয় হবে, যা আপনার মর্যাদা বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।
প্রশ্ন: ব্যস্ত জীবনে দ্বীনি প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করার মতো সময় পাই না, করণীয় কী?
উত্তর: সাহায্য শুধু অর্থ বা সময় দিয়ে হয় না। আপনি আপনার পরিচিত মহলে কোনো মাদ্রাসার জন্য প্রচার করতে পারেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ভালো কাজগুলো শেয়ার করতে পারেন অথবা তাদের জন্য অন্তর থেকে দোয়া করতে পারেন। আপনার সামান্য চেষ্টাই আল্লাহর কাছে অনেক বড় প্রতিদান বয়ে আনতে পারে।