
গীবত, আল্লাহর ওলিদের কারামত এবং ওস্তাদের জন্য জীবনবাজি রাখার সেই ঈমানদীপ্ত কাহিনী, যা আপনার চিন্তার জগৎ বদলে দেবে।
ভূমিকা: উল্টো হয়ে যাওয়া সমাজ
বর্তমান সময়ে আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করি, যেখানে সঠিককে বেঠিক এবং বেঠিককে সঠিক বলে মনে হয়। আমাদের মূল্যবোধগুলো যেন উল্টে গেছে। কলেজের একজন দাড়িওয়ালা, নামাজি ছাত্রকে দেখে আমরা আশ্চর্য হই, কিন্তু দ্বীন থেকে দূরে থাকা মুসলিম যুবককে দেখে আমাদের ভ্রূক্ষেপও হয় না। এই নৈতিক অবক্ষয়ের গভীরে গিয়ে সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন প্রখ্যাত আলেম মুফতি আবুল হাসান জকিগঞ্জী। তাঁর এই sylheti waz টি শুধুমাত্র একটি বাংলা ওয়াজ নয়, এটি আমাদের জন্য একটি আত্ম-উপলব্ধির আয়না। যারা একটি ভালো islamic video বা motivational waz খুঁজছেন, তাদের জন্য mufti abul hasan সাহেবের এই বয়ানটি নিঃসন্দেহে চিন্তার খোরাক জোগাবে।
গীবত: ব্যভিচারের চেয়েও মারাত্মক যে পাপকে আমরা পাপই মনে করি না
Waz mahfil-এর শুরুতে মুফতি আবুল হাসান একটি ভয়াবহ গুনাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেন, যা আমাদের সমাজে আজ ডাল-ভাতের মতো সাধারণ হয়ে গেছে—গীবত বা পরনিন্দা। তিনি বলেন, হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, "আল-গীবাতু আশাদ্দু মিনাজ্ জিনা", অর্থাৎ গীবত ব্যভিচারের চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। কিন্তু আমরা দুজন একত্রিত হলেই তৃতীয়জনের সমালোচনাকে কোনো অপরাধই মনে করি না। আমাদের এই মানসিকতা প্রমাণ করে, আমরা ভালো-মন্দের মানদণ্ডই হারিয়ে ফেলেছি।
আত্মিক দৃষ্টি: যখন পাপ চোখে দেখা যায়
এই উপলব্ধির গভীরতা বোঝাতে তিনি ইমামে আজম আবু হানিফা (রহ.)-এর একটি অসাধারণ ঘটনা তুলে ধরেন। এক ব্যবসায়ী অজু করছিলেন। অজু শেষে যখন তিনি ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ইমাম সাহেব তাকে বললেন, "ভাই, তুমি মানুষের গীবত করা ছেড়ে দাও।" লোকটি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, "হুজুর, আপনি কীভাবে জানলেন আমি গীবত করি?" ইমাম সাহেব উত্তর দিলেন:

"তুমি যখন কুলি করছিলে, তখন তোমার মুখ থেকে পানির সাথে আমি গীবতের গুনাহগুলো ঝরে পড়তে দেখেছি।"
সুবহানাল্লাহ! এই ঘটনাটি আমাদের শেখায় যে, সত্যিকারের আল্লাহওয়ালা মানুষদের আল্লাহ এক বিশেষ আধ্যাত্মিক দৃষ্টি বা 'কাশফ' দান করেন, যা দিয়ে তারা সাধারণ মানুষের পাপ-পুণ্যের অবস্থা পর্যন্ত আঁচ করতে পারেন।
ঈমানদীপ্ত কাহিনী: ওস্তাদের জন্য সাগরে ঝাঁপ দিলেন যিনি
ইলম বা জ্ঞান অর্জনের পথ কখনোই সহজ ছিল না। এর জন্য প্রয়োজন ছিল অপরিসীম ত্যাগ এবং উস্তাদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান। এই প্রসঙ্গে শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান (রহ.) এবং তাঁর ছাত্র মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)-এর একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কারণে যখন শাইখুল হিন্দকে মাল্টার কারাগারে নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছিল, তখন ছাত্র মাদানী (রহ.) জাহাজে উঠে পড়লেন তাঁর উস্তাদের খেদমত করার জন্য। ইংরেজ সৈন্যরা তাকে নামিয়ে দিতে চাইলে তিনি সাগরে ঝাঁপ দেন, কারণ উস্তাদের খেদমতের সুযোগ তিনি হারাতে চাননি।

কারাগারের কনকনে শীতের রাতে উস্তাদ তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উঠবেন, কিন্তু পানি বরফের মতো ঠান্ডা। ছাত্র মাদানী (রহ.) সারারাত পানির পাত্রটি নিজের পেটের নিচে রেখে শরীরের উত্তাপ দিয়ে উষ্ণ রেখেছেন, যেন উস্তাদের অজু করতে কষ্ট না হয়। শুধু তাই নয়, কারাগারে কোনো হাফেজ না থাকায় উস্তাদের খতম তারাবি পড়ার ইচ্ছা পূরণ করতে তিনি ৩০ দিনে পুরো কুরআন শরীফ মুখস্থ করে হাফেজ হয়ে যান এবং তারাবি পড়ান!
আল্লাহর ওলিদের দূরদৃষ্টি: ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আবু ইউসুফের কাহিনী
শিক্ষকের দূরদৃষ্টি একজন ছাত্রের জীবনকে কীভাবে বদলে দিতে পারে, তার এক অসাধারণ উদাহরণ হলো ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও তাঁর ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর ঘটনা। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) ছিলেন একজন এতিম এবং দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাঁর মা তাকে এক ধোপার দোকানে কাজে লাগিয়েছিলেন। কিন্তু ছোট্ট আবু ইউসুফ কাজের ফাঁকে ইমাম আবু হানিফার দরসে গিয়ে বসে থাকতেন। এতে বিরক্ত হয়ে তাঁর মা একদিন ইমাম সাহেবের কাছে নালিশ নিয়ে এলেন।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সেদিন সেই মাকে বলেছিলেন:
"ওগো আল্লাহর বান্দী! তুমি বলছ আমি তোমার ছেলেকে বেকার বানাচ্ছি? আমি তো দেখছি, এমন একদিন আসবে যখন তোমার এই ছেলে রাজা-বাদশাহদের দস্তরখানে বসে তাদের খাবার খাবে।"
পরবর্তীকালে ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) খলিফা হারুনুর রশিদের শাসনামলে প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন এবং ইমাম সাহেবের সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছিল।
আমাদের জন্য শিক্ষা
মুফতি আবুল হাসান জকিগঞ্জ সাহেবের এই bd waz থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাই:
- গীবত বা পরনিন্দার মতো ভয়াবহ গুনাহকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।
- আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি সংশোধন করতে হবে এবং ভালো কাজকে উৎসাহিত করতে হবে।
- আল্লাহওয়ালা মানুষদের সঙ্গ ও ভালোবাসা অর্জন করতে হবে, কারণ তাদের দোয়ায় ভাগ্য পরিবর্তন হতে পারে।
- শিক্ষক ও গুরুজনদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান ও খেদমত প্রদর্শন করতে হবে, যা আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম উপায়।
এই আলোচনাটি শেয়ার করে আপনিও পারেন একটি islamic status-এর মাধ্যমে এই অমূল্য জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে।
মূল আলোচনাটি শুনুন (ভিডিও)
উপসংহার:
এই islamic channel -এ পরিবেশিত waz new আলোচনাটি আমাদের আধ্যাত্মিক চিন্তাকে জাগ্রত করে। এটি আমাদের শেখায় যে, ঈমানের শক্তি, ওস্তাদের প্রতি ভক্তি এবং আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকলে যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই আলোচনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের জীবনকে সুন্দর করার তৌফিক দান করুন। আমিন।