
সূরা ইখলাসের বিস্ময়কর ফজিলত: মুফতি আবুল হাসান জকিগঞ্জ এর এক নতুন আলোচনা
ইসলামিক আলোচনা বা ওয়াজ আমাদের আত্মশুদ্ধি এবং জ্ঞান অর্জনের এক অনন্য মাধ্যম। বিশেষ করে যখন কোনো আলেম তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিমায় ও আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন, তখন তা শ্রোতাদের হৃদয়ে গভীরভাবে দাগ কাটে। এমনই একজন জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা হলেন মুফতি আবুল হাসান, যিনি তাঁর প্রাঞ্জল আলোচনা এবং বিশেষ করে সিলেটী ভাষায় দেওয়া বয়ানের জন্য পরিচিত। তাঁর একেকটি bangla waz যেন মানুষের জন্য হেদায়েতের বার্তা নিয়ে আসে। সম্প্রতি তাঁর একটি আলোচনায় তিনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং সূরা ইখলাসের অসামান্য ফজিলত তুলে ধরেছেন, যা ঈমানকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে।
মালিককে চেনার গুরুত্ব
আলোচনার শুরুতেই mufti abul hasan একটি চমৎকার সিলেটী প্রবাদ দিয়ে শুরু করেন— "কার অনুগ্রহে খাওগো দাসী, ঠাকুর চেনো না।" এই কথার মাধ্যমে তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞতার বিষয়টি তুলে ধরেন। আমরা আল্লাহর জমিনে চলি, তাঁর দেওয়া বাতাসে শ্বাস নিই, তাঁরই সৃষ্ট চোখ দিয়ে দেখি এবং কান দিয়ে শুনি। অথচ সেই মালিকের হুকুম মানতে আমরা দ্বিধা করি। এই waz মাহফিলে তিনি প্রশ্ন রাখেন, যে মালিক আমাদের সবকিছু দিয়েছেন, তাঁর অবাধ্য হওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ? এটি নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়, যা আমাদের কেবল শাস্তির দিকেই ঠেলে দেয়। তিনি একটি সহজ উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেন: একজন কর্মচারী যদি মালিকের দেওয়া কাজ না করে ফাঁকি দেয়, তবে সে যেমন চাকরি হারায়, আমরাও যদি আল্লাহর হুকুম অমান্য করি, তাহলে আমাদের পরিণতি কী হতে পারে? এই বিষয়টি আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার সুযোগ করে দেয়।
মৃত্যুর পরেই আসল জীবন শুরু
মানুষের জীবন সম্পর্কে একটি গভীর দর্শন এই abul hasan waz -এ উঠে এসেছে। তিনি বলেন, অনেকে মনে করে মরে গেলেই সব শেষ, মানুষ পচে যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মৃত্যুর পরেই মানুষের আসল জীবন শুরু হয়। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, একটি কুমড়োর বীজকে যখন মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়, তখন সেটি পচে যায় না, বরং সেখান থেকেই তার আসল জীবন শুরু হয়। একটি অঙ্কুর গজায়, লতা হয় এবং ফল দেয়। ঠিক তেমনি, মানুষকে কবর দেওয়ার পর থেকেই তার অনন্ত জীবনের সূচনা ঘটে। এই জীবনের শান্তি নির্ভর করে দুনিয়ার আমলের উপর।
সূরা ইখলাস: ছোট আমলে বিশাল প্রতিদান
এই new bangla waz -এর অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয় ছিল সূরা ইখলাসের ফজিলত। আমরা আখেরি নবীর উম্মত, আমাদের হায়াত খুব অল্প। তাই আল্লাহ আমাদের জন্য এমন কিছু ছোট আমল দিয়েছেন, যার প্রতিদান অনেক বড়। মুফতী আবুল হাসান বলেন, সূরা ইখলাস পাঠের অবিশ্বাস্য কিছু ফজিলত রয়েছে:
- একবার পাঠ করলে: ১০ পারা কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব।
- তিনবার পাঠ করলে: পূর্ণ এক খতম কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব পাওয়া যায়।
রাসূল (সা) এর একজন সাহাবী ছিলেন যিনি নফল নামাজে বারবার এই সূরা পড়তেন। কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, "ইয়া রাসূলাল্লাহ, এই সূরাটি আমার খুব ভালো লাগে, এর সাথে আমার মহব্বত রয়েছে।" নবীজি (সা) তখন বললেন, "এই সূরার প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে পৌঁছে দেবে।" এই sylheti waz new বয়ানটি থেকে আমরা জানতে পারি যে, হযরত আবু যর গিফারী (রা) অবসর সময়ে এত বেশি এই সূরা পাঠ করতেন যে, জমিনের চেয়ে আসমানে তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। তাঁর এই একটি আমলের কারণে আসমানের ফেরেশতাদের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন।
শুদ্ধ উচ্চারণের গুরুত্ব
তবে এই বিশাল প্রতিদান লাভের জন্য আমলটি শুদ্ধভাবে করা আবশ্যক। মুফতি আবুল হাসান শুদ্ধ উচ্চারণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, সূরা ইখলাসের শুরুতে আছে ‘ক্বুল’ (قُلْ), যার অর্থ "বলুন"। কিন্তু কেউ যদি ভুল করে ‘কুলু’ (كُلُوا) উচ্চারণ করে, তবে এর অর্থ হয়ে যাবে "খাও"। তখন পুরো বাক্যের অর্থ দাঁড়াবে (নাউজুবিল্লাহ) "খাও আল্লাহকে", যা সওয়াবের বদলে মারাত্মক গুনাহের কারণ হবে। তাই দ্বীনি মারকাজ বা মাদ্রাসা থেকে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য।
অভাব দূর করার সহজ আমল
শুধু পরকালীন মুক্তিই নয়, দুনিয়াবী সমস্যার সমাধানেও সূরা ইখলাসের রয়েছে বিশেষ কার্যকারিতা। এক গরীব সাহাবী যখন রাসূল (সা) এর কাছে তাঁর অভাবের কথা জানালেন, তখন নবীজি (সা) তাঁকে একটি সহজ আমল শিখিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, "যখনই ঘরে প্রবেশ করবে, প্রথমে সালাম দেবে, এমনকি ঘরে কেউ না থাকলেও। এরপর একবার সূরা ইখলাস পাঠ করবে।" সেই সাহাবী এই আমল শুরু করার পর আল্লাহ তাঁর সম্পদে এত বরকত দান করলেন যে, তিনি শুধু নিজে সচ্ছল হননি, আত্মীয়-স্বজনদেরও সাহায্য করতে পারতেন। mufti abul hasan waz এর এই অংশটি আমাদের জন্য এক বিরাট শিক্ষা।
আল্লাহর একত্ববাদের নিখুঁত পরিচয়
সূরা ইখলাস নাজিলের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, মক্কার কাফেররা যখন নবীজি (সা) কে আল্লাহর বংশপরিচয় ও তিনি কী দিয়ে তৈরি এসব প্রশ্ন করেছিল, তখন তার জবাবে আল্লাহ এই সূরা নাজিল করেন। এই সূরায় আল্লাহ তাঁর পরিচয় তুলে ধরেছেন:
- ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ: বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়। ‘আহাদ’ শব্দটি দ্বারা এমন একত্ব বোঝানো হয়েছে যার কোনো দ্বিতীয় বা অংশীদার নেই।
- আল্লাহুস সামাদ: আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। অর্থাৎ, তিনি কারো ওপর নির্ভরশীল নন, বরং সমস্ত সৃষ্টি তাঁর ওপর নির্ভরশীল।
- লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ: তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্ম নেননি। এর মাধ্যমে আল্লাহর কোনো পিতা, মাতা বা সন্তান থাকার ধারণাকে পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।
- ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ: তাঁর সমতুল্য বা সমকক্ষ আর কেউ নেই।
মূল আলোচনাটি শুনুন (ভিডিও)
এই new waz -টি শোনার পর আমাদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসা আরও বৃদ্ধি পায়। তাঁর আলোচনাগুলো বিভিন্ন famous islamic channel -এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আসুন, আমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি এবং সূরা ইখলাসের মতো সহজ ও বরকতময় আমলকে জীবনের অংশ বানিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
সম্পর্কিত আলোচনা পড়ুন
হযরত আলী (রাঃ)-এর সেই বিখ্যাত রুটি ভাগের অবিস্মরণীয় বিচার কাহিনীটি পড়ুন।
পোস্টটি পড়ুন