
ইসলামের সোনালী ইতিহাসের পাতায় এমন অনেক ঈমানদীপ্ত ঘটনা উজ্জ্বল হয়ে আছে, যা প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ে প্রেরণা জাগায়।
ভূমিকা: ঈমানের শক্তির এক অমর উপাখ্যান
বিভিন্ন waz mahfil বা ইসলামিক আলোচনায় আমরা সাহাবীদের জীবনের অমূল্য কাহিনী শুনি। এমনই এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি একটি new waz আলোচনায় তুলে ধরেছেন মাওলানা ইসমাইল হোসেন বুখারী। এই bangla waz-টিতে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাফা (রাঃ) এবং এক দাম্ভিক রোমান সম্রাট-এর সেই পরীক্ষার কথা বর্ণনা করেছেন, যেখানে ঈমানের শক্তি জাগতিক সব লোভ ও শাস্তিকে পরাজিত করেছিল।

বাদশার প্রলোভন ও ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা
হযরত ওমর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে মুসলিম বাহিনীর একটি দল রোমানদের হাতে বন্দী হয়। সেই দলের নেতা ছিলেন তরুণ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাফা (রাঃ)। রোমান সাম্রাজ্য-এর অধিপতি মুসলিমদের ঈমানের দৃঢ়তা পরীক্ষা করতে চাইলেন। তিনি আব্দুল্লাহ (রাঃ)-কে প্রস্তাব দিলেন, "যদি তুমি ইসলাম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করো, তবে আমার সুন্দরী কন্যা ও অর্ধেক রাজত্ব তোমাকে দেওয়া হবে।"
'হে রোমের কুকুর!': এক সাহাবীর ঈমানী হুংকার
ইসমাঈল বুখারীর ওয়াজ-এর এই পর্বে ফুটে উঠেছে সেই অবিশ্বাস্য মুহূর্তের চিত্র। বাদশার প্রস্তাব শুনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) এর চেহারা রাগে রক্তিম হয়ে গেল। তিনি দাঁড়িয়ে হুংকার দিয়ে বললেন:

"এই রোমের কুকুর! তুই কি দুনিয়ার বিনিময়ে আমার ঈমান কিনতে চাস? শুনে রাখ, তুই যদি আমাকে গোটা দুনিয়ার মালিকও বানিয়ে দিস, আমি আমার ঈমান তোর কাছে বিক্রয় করবো না!"
এই নির্ভীক জবাবে হতবাক সম্রাট ক্রোধে ফেটে পড়লেন এবং শুরু হলো তাঁর নির্মম পরীক্ষা।
ক্ষুধা, হারাম খাবার ও ফুটন্ত তেলের পরীক্ষা
প্রথমে তাঁকে দিনের পর দিন অভুক্ত রাখা হলো। যখন তিনি ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর, তখন তাঁর সামনে পরিবেশন করা হলো শূকরের মাংস এবং মদ মেশানো পানি। কিন্তু সেই সাহাবী হারাম খাবারের দিকে ফিরেও তাকালেন না। ব্যর্থ হয়ে সম্রাট চূড়ান্ত শাস্তির নির্দেশ দিলেন। একটি বিশাল পাত্রে তেল টগবগ করে ফোটানো হলো। আব্দুল্লাহ (রাঃ)-এর চোখের সামনেই আরেকজন মুসলিম বন্দীকে সেই ফুটন্ত তেলে ফেলে শহীদ করা হলো, যাতে তিনি ভয় পেয়ে যান। কিন্তু তাঁর ঈমান রইলো অটল।

শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা: যে কান্নার কারণ মৃত্যুভয় ছিল না
যখন জল্লাদরা আব্দুল্লাহ (রাঃ)-কে ধরে ফুটন্ত তেলের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি হঠাৎ কাঁদতে শুরু করলেন। সম্রাট উল্লাসিত হয়ে ভাবলেন, অবশেষে তিনি ভয় পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর কান্নার কারণ শুনে সেদিন রোমের মাটি পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল। আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন:
"আমি মরার ভয়ে কাঁদি না। আমি কাঁদি এই আফসোসে যে, আমার জীবন মাত্র একটা, যা আমি আল্লাহর জন্য একবারই উৎসর্গ করতে পারব। আমার তো মন চায়, আল্লাহ যদি আমাকে শত শত জীবন দিতেন, তবে প্রত্যেকটি জীবন আমি আল্লাহর জন্য, ঈমানের জন্য এভাবে বিলিয়ে দিতাম!"
মূল আলোচনাটি শুনুন (ভিডিও)
বাদশার আত্মসমর্পণ ও সকল মুসলিমের মুক্তি
ঈমানের এমন শক্তি দেখে বাদশা উপলব্ধি করলেন, এই বিশ্বাসকে পরাজিত করা অসম্ভব। তিনি শেষ চেষ্টা হিসেবে বললেন, "আমার কপালে একটি চুম্বন করো, আমি তোমাকে এবং তোমার সব সঙ্গীকে মুক্ত করে দেবো।" আব্দুল্লাহ (রাঃ) নিজের জন্য নয়, বরং সকল মুসলিম ভাইয়ের মুক্তির জন্য সেই শর্তে রাজি হলেন। তাঁর বুদ্ধিমত্তায় সেদিন মুক্তি পেয়েছিল গোটা মুসলিম দলটি।

আমাদের জন্য শিক্ষা
এই waz থেকে আমরা জানতে পারি ঈমানের প্রকৃত মূল্য। মাওলানা ইসমাইল হোসেন বুখারী কাশিয়ানী হুজুরের প্রতিটি ইসলামিক লেকচার আমাদের জন্য পথপ্রদর্শক। এই নতুন ওয়াজ আমাদের শেখায় যে, ঈমানের সামনে পৃথিবীর সবকিছুই তুচ্ছ।
সম্পর্কিত আলোচনা পড়ুন
হযরত ইদ্রিস (আঃ) এর রুহ কেন চতুর্থ আসমানে কবজ করা হয়েছিল এবং তাকদিরের সেই বিস্ময়কর রহস্য সম্পর্কে জানুন।
পোস্টটি পড়ুন