
মৃত্যুর পরেই কি সব শেষ? ইসলাম আমাদের শেখায়, এরপর শুরু হবে পরকালের এক অনন্ত জীবন, যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ভয়াবহ ধাপ হলো কিয়ামত।
ভূমিকা: পরকালের প্রস্তুতি
সম্প্রতি আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী'র একটি tafsir mahfil থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আজকের এই লেখা, যেখানে কিয়ামতের ভয়াবহতা এবং সেই কঠিন দিনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এই ধরনের bangla waz আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। আলোচনাটি শুরু হয়েছিল সূরা আল-কারিয়াহ'র কয়েকটি আয়াত দিয়ে, যা holy quran-এর এক অমূল্য শিক্ষা।
বিধান নয়, নসিহতেই আত্মার পরিবর্তন
আলোচনার শুরুতে পবিত্র কোরআনের গঠন নিয়ে একটি চমৎকার বিষয় তুলে ধরা হয়। কোরআনের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার আয়াতের মধ্যে মাত্র ৫০০ আয়াতে রয়েছে বিধি-বিধান বা হালাল-হারামের নির্দেশনা। বাকি প্রায় ছয় হাজার আয়াতেই রয়েছে ওয়াজ ও নসিহত। মানুষের স্বভাব হলো সে বিধান জানলেও সহজে তা পালন করতে চায় না। আল্লাহ মানুষকে জোর করে ইবাদত করাতে চান না, কারণ স্বেচ্ছায় করা ইবাদতই কবুল হয়। এই সমস্যার সমাধান হলো নসিহত। যখন মানুষকে বোঝানো হয় যে, আল্লাহর বিধান পালন করলে কী পুরস্কার রয়েছে এবং অমান্য করলে কী ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে, তখন তার ভেতর থেকে বিধান পালনের আগ্রহ তৈরি হয়।

কেমন হবে সেই ভয়ংকর হাশরের মাঠ?
যতদিন মানুষের অন্তরে কিয়ামত-এর ভয় থাকবে, ততদিন সে অন্যায় ও পাপ থেকে দূরে থাকবে। nurul islam olipuri তার বয়ানে সেই ভয়াবহ দিনের কিছু চিত্র তুলে ধরেছেন:
- বিবস্ত্র অবস্থা এবং ৫০ হাজার বছরের অপেক্ষা: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, হাশরের মাঠে মানুষকে নগ্ন অবস্থায় ওঠানো হবে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ংকর হবে যে, লজ্জা বা অন্য কোনো দিকে তাকানোর সাহস বা হুঁশ কারো থাকবে না। মানুষ ৫০ হাজার বছর ধরে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে আল্লাহর বিচারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকবে।
- আল্লাহর প্রশ্ন "আজকের সার্বভৌমত্ব কার?": যখন সমস্ত সৃষ্টি নীরব ও নিস্তব্ধ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ্ গর্জন করে জিজ্ঞাসা করবেন, "আজকের শাসন ক্ষমতা কার?"। ভয়ে কেউ উত্তর দেওয়ার সাহস পাবে না। তখন আল্লাহ নিজেই উত্তর দেবেন, "একক ও প্রতাপশালী আল্লাহর জন্য"।
- ক্ষুধার্ত জাহান্নামের গর্জন: একদিকে মানুষ ভয়ে কাঁপতে থাকবে, অন্যদিকে জাহান্নামকে হাশরের মাঠের কাছে নিয়ে আসা হবে। লক্ষ কোটি বছরের ক্ষুধার্ত জাহান্নাম আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলবে, "হে আল্লাহ! অনুমতি দাও, আমি এক লোকমায় এই সমস্ত মানুষকে গিলে আমার ক্ষুধা মেটাই।"
- পাঁচটি প্রশ্ন: হাশরের মাঠে প্রত্যেক ব্যক্তিকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে: জীবন, যৌবন, সম্পদের উপার্জন ও ব্যয় এবং অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী আমল সম্পর্কে।
.webp)
যে কঠিন বিপদে নবীরাও বলবেন ‘আমার জান বাঁচাও’
হাশরের মাঠে তিনটি সময় এতটাই কঠিন হবে যে, নবী-রাসূলগণও নিজের বাবা-মা, সন্তান-সন্ততির কথা ভুলে গিয়ে "ইয়া রব্বি নাফসি, ইয়া রব্বি নাফসি" (হে আল্লাহ! আমার জান বাঁচাও) বলে ফরিয়াদ করবেন। কিন্তু সেই কঠিন মুহূর্তেও একমাত্র আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজের উম্মতের জন্য পেরেশান থাকবেন। তিনি বলবেন, "ইয়া রব্বি উম্মতি, ইয়া রব্বি উম্মতি" (হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে বাঁচাও)।
মূল আলোচনাটি শুনুন (ভিডিও)
শেষ কথা
দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী এক পরীক্ষা মাত্র। ওলিপুরী ওয়াজ থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই তা হলো, আমাদের প্রতিটি কাজের হিসাব কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে দিতেই হবে। হাশরের দিনের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে হলে দুনিয়াতে আমাদের আমলকে সুন্দর করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে কিয়ামতের কঠিন দিনে তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দান করুন। আমিন।
সম্পর্কিত আলোচনা পড়ুন
হাশরের ময়দানের তিনটি সবচেয়ে ভয়াবহ বিপদ সম্পর্কে আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পড়ুন।
পোস্টটি পড়ুন