বিয়ে আগে নাকি বাচ্চা আগে? সামাজিক অবক্ষয় ও মুক্তির পথ | মুফতি বশির আহমদের নতুন ওয়াজ

বিয়ে আগে নাকি বাচ্চা আগে

ভূমিকা

আজকের সমাজে আমরা এমন সব প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছি যা একসময় কল্পনাতীত ছিল। বিয়ে আগে নাকি বাচ্চা আগে? —এই প্রশ্নই প্রমাণ করে, আমাদের নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ কতটা হুমকির মুখে। এই ভয়াবহ সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হলেন মুফতি বশির আহমদ বি-বাড়িয়া। তাঁর সাম্প্রতিক এক new bangla waz মাহফিলে তিনি এই বিষয়গুলো নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন, যা প্রতিটি ঈমানদারের জন্য চিন্তার খোরাক জোগায়।

এই bangla waz অনুষ্ঠানে তিনি শুধু সমস্যার কথাই বলেননি, বরং কোরআন ও হাদিসের আলোকে এর সমাধান এবং মুক্তির পথও বাতলে দিয়েছেন। চলুন, সেই আলোচনার গভীরে প্রবেশ করি।

হালাল-হারামের বিভ্রান্তি: যখন সম্পর্কগুলো পথ হারায়

মুফতি বশির আহমদ তাঁর আলোচনার একটি পর্যায়ে সমাজের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন, যা প্রায়ই আমাদের আশেপাশে ঘটে থাকে। তিনি একটি বাস্তবসম্মত ঘটনার মাধ্যমে দেখান, কীভাবে সামান্য অসতর্কতা এবং ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

ঘটনাটি এমন—এক নারী তার স্বামীকে অনুরোধ করে তার ছোট বোনকে কলেজে আনা-নেওয়ার দায়িত্ব দেন। কিন্তু এই আপাত নির্দোষ কাজটিই একসময় ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। শয়তানের প্ররোচনায় দুলাভাই এবং শ্যালিকার মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং এক পর্যায়ে তারা পালিয়ে বিয়ে করে।

এই waz mahfil থেকে আমরা জানতে পারি, শরীয়তের বিধান হলো, দুই বোনকে একসাথে বিয়ে করা হারাম। যদি কেউ এমনটা করে, তবে দ্বিতীয় বিয়েটি বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তাদের সম্পর্কটি হবে সরাসরি ঝিনা। এই সম্পর্ক থেকে জন্ম নেওয়া সন্তানও হবে অবৈধ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজের "চা-স্টলের মুফতিরা" ভুল ফতোয়া দিয়ে বলে যে, আগের বউ তালাক হয়ে গেছে। মুফতি বশির আহমদ এই ধরনের জ্ঞানহীন ফতোয়া থেকে সাবধান থাকার জন্য কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন।

হালাল-হারামের বিভ্রান্তি: যখন সম্পর্কগুলো পথ হারায়

নিজস্ব প্রতিফলন:

এই ঘটনাটি আমাদের শেখায় যে, মাহরাম এবং গায়রে-মাহরাম সম্পর্ক বিষয়ে ইসলামের জ্ঞান থাকা কতটা জরুরি। সরল বিশ্বাস বা আধুনিকতার দোহাই দিয়ে শরীয়তের সীমা লঙ্ঘন করলে তার পরিণতি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেই ভয়াবহ হতে পারে।

শয়তানের সুর: গান-বাজনা কেন হারাম?

আলোচনার এক পর্যায়ে হুজুর আধুনিক সমাজের আরেকটি বড় ব্যাধি—গান-বাজনার ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, শয়তানের অন্যতম বড় একটি ফাঁদ হলো গান-বাজনা, যা এখন মসজিদের ভেতরে নামাজের সময়ও রিংটোন আকারে বেজে ওঠে। এই islamic video বা অডিওর যুগে এটি একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

কোরআন ও হাদিসের আলোকে তিনি প্রমাণ করেন যে গান-বাজনা সম্পূর্ণরূপে হারাম।

  • কোরআনের দলিল: তিনি সূরা লোকমানের ৬ নম্বর আয়াত, সূরা নাজমের ৫৯ নম্বর আয়াত এবং সূরা বনী ইসরাইলের ৬৪ নম্বর আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে দেখান যে, আল্লাহ তা'আলা গান-বাজনাকে "বৃথা কথা" এবং "শয়তানের আওয়াজ" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
  • হাদিসের শিক্ষা: আল্লাহর হাবিব (ﷺ) বলেছেন, ইবলিশ পৃথিবীতে সর্বপ্রথম গান আবিষ্কার করেছিল। গান মানুষের অন্তরে মুনাফেকির চারা জন্মায়, ঠিক যেমন পানি জমিতে ঘাস জন্মায়।
  • শয়তানের চক্রান্ত: তিনি হাদিসের আলোকে এক ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরেন—যখন কেউ গান শোনে, তখন শয়তান তার কাঁধে চড়ে বসে এবং তার কানে ধরে বুকে লাথি মারতে থাকে, যা তাকে এক পৈশাচিক আনন্দে বিভোর করে রাখে।

এই notun waz থেকে আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারি যে, গান-বাজনার সাথে ঈমানের সহাবস্থান সম্ভব নয়।

কুরআনের আলোকে:

وَٱسۡتَفۡزِزۡ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتَ مِنۡهُم بِصَوۡتِكَ...

অনুবাদ: "আর তোমার আওয়াজ (গান-বাজনা) দ্বারা তাদের মধ্যে যাকে পারো পদস্খলিত করো..." (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৬৪)

মুক্তির পথ: জবানের হেফাজত ও তওবার শক্তি

তাহলে এই সকল ফেতনা থেকে মুক্তির উপায় কী? মুফতি বশির আহমদ বলেন, এর মূল চাবিকাঠি হলো নিজের জবানকে নিয়ন্ত্রণ করা। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিদিন সকালে জবানকে অনুরোধ করে বলে, "তুমি যদি সোজা থাকো, আমরাও নিরাপদ থাকি।" কারণ জবানের ভুলই পুরো শরীরকে বিপদে ফেলে।

তবে মানুষ হিসেবে আমাদের ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু ভুলের পর করণীয় কী? হুজুর একটি হৃদয়গ্রাহী বাস্তব কাহিনী বর্ণনা করেন। হযরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে এক ব্যক্তি সারাজীবন গান-বাজনা করে বৃদ্ধ বয়সে এসে তওবা করে কবরস্থানে পড়েছিলেন। আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং ওমর (রা.)-কে স্বপ্নের মাধ্যমে নির্দেশ দিয়ে সেই ব্যক্তির জন্য খাবার ও ভাতার ব্যবস্থা করে দেন।

এই bangladeshi waz থেকে আমরা শিখতে পারি যে, আল্লাহ তা'আলার রহমতের দরজা সবসময় খোলা। যত বড় পাপীই হোক না কেন, আন্তরিকভাবে তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন এবং সম্মানিত করেন।

                                    মূল আলোচনাটি ভিডিওতে শুনুন

এক নজরে আলোচনার সারমর্ম

সম্পর্কের সীমা: দুই বোনকে একসাথে বিয়ে করা হারাম। ধর্মীয় জ্ঞান ছাড়া সামাজিক সম্পর্ক বিপদ ডেকে আনে।

🎵 শয়তানের সুর: গান-বাজনা কোরআন ও হাদিসের আলোকে হারাম এবং এটি অন্তরে মুনাফেকি সৃষ্টি করে।

👅 জবানের হেফাজত: জবানের সঠিক ব্যবহারই সকল অঙ্গকে নিরাপদ রাখে এবং ফেতনা থেকে বাঁচায়।

🤲 তওবার শক্তি: আন্তরিক তওবা যত বড় পাপীই হোক না কেন, আল্লাহর কাছে সম্মানিত করে তোলে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

প্রশ্ন: দুই বোনকে একসাথে বিয়ে করা কি কোনোভাবেই সম্ভব?

উত্তর: না, ইসলামী শরীয়তে এটি সম্পূর্ণরূপে হারাম। যদি প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু হয় বা তাকে তালাক দেওয়া হয়, তবে ইদ্দত পালনের পর তার বোনকে বিয়ে করা যাবে।

প্রশ্ন: ইসলামে কি সব ধরনের গানই হারাম?

উত্তর: হ্যাঁ, বাদ্যযন্ত্রসহ সকল প্রকার গান যা অশ্লীলতা বা হারাম বিষয়ের দিকে নিয়ে যায়, তা হারাম। তবে, বাদ্যযন্ত্র ছাড়া এবং শরীয়তের সীমার মধ্যে থাকা ইসলামিক হামদ-নাত বা গজল জায়েজ।

প্রশ্ন: মুফতি বশির আহমদ সাহেবের এমন আলোচনা আরও কোথায় পাওয়া যাবে?

উত্তর: ইউটিউব এবং বিভিন্ন ইসলামিক প্ল্যাটফর্মে "Mufti Bashir Ahmed" বা "bangla waz new" লিখে সার্চ করলে তাঁর অসংখ্য জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ও ওয়াজ মাহফিল পাওয়া যাবে। এবং এখানে ক্লিক করলে সরাসরি তার অনেক ভিডিও পেয়েযাবেন

এই আলোচনা থেকে আমাদের করণীয়:

  • ✅ হালাল-হারাম সম্পর্কে, বিশেষ করে পারিবারিক সম্পর্ক বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা।
  • ✅ মোবাইল থেকে অপ্রয়োজনীয় গান-বাজনা ডিলিট করে দেওয়া এবং রিংটোনের পরিবর্তে সাধারণ টোন বা আজান ব্যবহার করা।
  • ✅ নিজের জবানের ব্যবহারের প্রতি সচেতন হওয়া এবং অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকা।
  • ✅ কোনো ভুল হয়ে গেলে হতাশ না হয়ে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তওবা করা।

উপসংহার

পরিশেষে, mufti bashir ahmed-এর এই আলোচনা আমাদের জন্য এক সতর্কবার্তা। বিয়ে-শাদী, হালাল-হারাম এবং বিনোদনের মতো বিষয়গুলোতে ইসলামি শরীয়তের জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য। সমাজের ভ্রান্ত ধারণা ও "চা-স্টলের মুফতিদের" থেকে বেঁচে থেকে কোরআন ও সুন্নাহর সঠিক পথে চলাই হলো দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার একমাত্র উপায়। যারা এমন শিক্ষণীয় islamic channel বা waz bangla new আলোচনা শোনেন, তাদের উচিত এই শিক্ষাগুলো নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

সম্পর্কিত আলোচনা পড়ুন

এক মুসলিম নারীর রক্তে লেখা চিঠি: যেভাবে কেঁপে উঠেছিল ভারত বর্ষের ইতিহাস

পোস্টটি পড়ুন

আমাদের ফলো করে পাশে থাকুন

নতুন পোস্ট প্রকাশের সাথে সাথে আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন।

ফলো করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ

নবীনতর পূর্বতন