
মুফতি আশেকে এলাহীর সুমধুর কন্ঠে যেভাবে বদলে গিয়েছিল একটি গোত্র
ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যা প্রমাণ করে কোরআনের বাণী কতটা শক্তিশালী এবং হৃদয়গ্রাহী। আল্লাহর কালামের প্রতিটি আয়াত মানুষের অন্তরকে আলোকিত করার এক অলৌকিক ক্ষমতা রাখে। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা, মুফতি আশেকে এলাহী, প্রায়ই তার ওয়াজ মাহফিল-এ এমন ঈমানজাগানিয়া ঘটনা তুলে ধরেন, যা তরুণ প্রজন্ম সহ সকল স্তরের মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। তার মধুর কন্ঠে পরিবেশিত একেকটি বাংলা ওয়াজ নিছক আলোচনা নয়, বরং তা আত্মশুদ্ধির এক ঐশী ব্যবস্থাপত্র।
সম্প্রতি তার একটি latest waz-এ বর্ণিত এমনই এক বিস্ময়কর ঘটনা নিয়ে এই আলোচনা, যেখানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পবিত্র জবানে উচ্চারিত একটিমাত্র আয়াতের তেলাওয়াতে একটি পুরো গোত্র ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিল।
নবীজির (ﷺ) বিনয় ও এক ঐশী ঘোষণা
ঘটনার প্রেক্ষাপট ছিল এমন—আরবের একটি গোত্র নবীজি (ﷺ) সম্পর্কে যাচাই করার জন্য একদল জ্ঞানী ব্যক্তিকে মক্কায় পাঠায়। তারা এসে রাসূল (ﷺ)-কে দুটি প্রশ্ন করে: আপনার পরিচয় কী এবং আপনার মিশন কী?
আল্লাহর হাবিব অত্যন্ত বিনয়ের সাথে উত্তর দিলেন, "আমি আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ।" যদিও তাঁর প্রকৃত শান ও মর্যাদা ছিল আসমান-জমিনের চেয়েও বিশাল। যেমনটি একটি ফার্সি শের-এ বলা হয়েছে:
ওহা তক হ্যায় নবুয়াত মোস্তফা কি।
অর্থাৎ, যেখানে আল্লাহর প্রভুত্ব বিস্তৃত, সেখানেই মোস্তফা (ﷺ)-এর নবুয়ত বিস্তৃত। এমন অসীম মর্যাদার অধিকারী হয়েও তিনি নিজেকে প্রকাশ করলেন বিনয়ের সর্বোচ্চ শিখর থেকে। তাঁর মিশন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, "আনা আব্দুল্লাহি ওয়া রাসুলুল্লাহ" — অর্থাৎ, "আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর প্রেরিত রাসূল।"
কোরআনের সুরে যেভাবে গলে গেল কঠিন হৃদয়
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে আল্লাহর হাবিব (ﷺ) তাদের আল্লাহর একটি বাণী শোনানোর ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। অতঃপর তিনি তাঁর সেই নবুয়তি ও মোবারক জবানে কোরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন। সেই তেলাওয়াতের স্বর্গীয় মাধুর্য এতটাই অবিশ্বাস্য ছিল যে, লোকগুলো বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। তাদের অন্তর এমনভাবে আলোড়িত হলো যে, তারা আয়াতটি দ্বিতীয়বার শোনার জন্য অনুরোধ করলো। আল্লাহর রাসূল দ্বিতীয়বার পাঠ করলেন। তাদের মুগ্ধতা আরও বাড়ল, তারা তৃতীয়বার শোনার জন্য আকুতি জানাল।


এই new bangla waz থেকে আমরা জানতে পারি, তিনবার আয়াতটি শোনার পর তাদের আর কোনো প্রশ্নের প্রয়োজনই হলো না। কোরআনের সেই শক্তিশালী বাণী তাদের অন্তরের গভীরে গেঁথে গেল।
চেহারা দেখেই মিলল সব উত্তর: এক আয়াত শুনেই হাজারো মানুষের ইসলাম গ্রহণ
প্রতিনিধি দলটি যখন তাদের নেতা আকসাম বিন সাইফির কাছে ফিরে গিয়ে পুরো ঘটনা এবং সেই আয়াতটি বর্ণনা করল, তখন আকসামের অন্তরও সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে গেল। তিনি বলে উঠলেন, "এমন বাণী কোনো মিথ্যাবাদীর হতে পারে না।"
সাথে সাথে তিনি তার গোত্রের হাজার হাজার লোককে নিয়ে নবীজি (ﷺ)-এর দরবারে হাজির হলেন। তার মনে অনেক প্রশ্ন জমা ছিল, কিন্তু রাসূল (ﷺ)-এর নূরানী চেহারার দিকে তাকানো মাত্রই এক অলৌকিক ঘটনা ঘটল। আকসাম বিন সাইফি বলেন, "মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর চেহারা দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনের সব প্রশ্নের উত্তর আমি পেয়ে গেছি।"
তাঁর আর কোনো প্রশ্ন করার প্রয়োজনই হলো না। তিনি সেখানেই তাদের দল সহ ইসলামের সুমহান কালেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে যান। এই islamic video - এর মতো ঘটনাগুলো আমাদের ঈমানকে সতেজ করে তোলে এবং প্রমাণ করে, সত্যকে গ্রহণ করার জন্য একটি বিশুদ্ধ অন্তরই যথেষ্ট।


কোন সেই অলৌকিক আয়াত? সূরা আন-নাহলের ৯০ নম্বর আয়াত
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, "পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে সারগর্ভ ও ব্যাপক অর্থবোধক আয়াত হলো সূরা আন-নাহলের ৯০ নম্বর আয়াত।" তিনি বলেন, আল্লাহ যদি পুরো কোরআনে আর কোনো আয়াত না দিয়ে শুধু এই একটি আয়াত দিতেন, তবে এটিই মানুষের হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যেত। এ কারণেই জুমার খুতবার শেষে খতিব সাহেবরা এই আয়াতটি পাঠ করেন।
إِنَّ ٱللَّهَ يَأْمُرُ بِٱلْعَدْلِ وَٱلْإِحْسَٰنِ وَإِيتَآئِ ذِى ٱلْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ ٱلْفَحْشَآءِ وَٱلْمُنكَرِ وَٱلْبَغْىِ ۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
অনুবাদ: "নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।" (সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯০)
এই best bangla waz থেকে আসুন জেনে নিই, সেই আয়াতে আল্লাহ কী বলেছেন। আল্লাহ তা'আলা এই আয়াতে তিনটি কাজের আদেশ দিয়েছেন এবং তিনটি কাজ থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
তিনটি ঐশী আদেশ:
- আল-আদল (عدل): ন্যায়বিচার, ভারসাম্য ও একত্ববাদ।
- আল-ইহসান (إحسان): অনুগ্রহ ও সর্বোত্তম আচরণ।
- ইতা-ই-যিল কুরবা (إيتاء ذي القربى): আত্মীয়-স্বজনের অধিকার আদায় করা।
তিনটি কঠোর নিষেধাজ্ঞা:
- আল-ফাহশা (فحشاء): সকল প্রকার অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ।
- আল-মুনকার (منكر): বিবেক ও শরীয়ত গর্হিত সকল মন্দ কাজ।
- আল-বাগয়ি (بغي): বিদ্রোহ, জুলুম ও সীমালঙ্ঘন।
আমাদের অন্তর কেন প্রভাবিত হয় না? একালের প্রতিচ্ছবি
মুফতি আশেকে এলাহী নোয়াখালী অঞ্চলের এই কৃতি সন্তান তার waz bangla আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলেন: আকসাম বিন সাইফির মতো মানুষেরা এক আয়াত শুনেই বদলে গেল, কিন্তু আজ আমরা হাজারো ওয়াজ মাহফিল ও islamic bangla waz শুনেও কেন আগের মতোই থেকে যাই?
কারণ একটাই—আমাদের দিল বা অন্তরের অবস্থা। আমাদের অন্তর আজ দুনিয়ার ব্যবসা, চাকরি, ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা আর নানা মোহে এতটাই কঠিন ও পূর্ণ হয়ে আছে যে, সেখানে কোরআনের নূর প্রবেশ করতে পারছে না। আকসাম বিন সাইফির একটি "ভাঙ্গা দিল" বা সত্য অনুসন্ধানী অন্তর ছিল, যা আল্লাহর বাণী গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।
আজ থেকেই শুরু হোক পরিবর্তন: আপনার জন্য ৪টি করণীয়
এই আলোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বসে থাকলেই চলবে না। আসুন, আজ থেকেই কয়েকটি ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে নিজেদের জীবনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করি।


- ১. আয়াতটি মুখস্থ করুন: সূরা নাহলের এই ৯০ নম্বর আয়াতটি অর্থসহ মুখস্থ করার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন অন্তত একবার এর অর্থ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন।
- ২. আত্মীয়ের খোঁজ নিন: আজই আপনার কোনো নিকটাত্মীয়কে ফোন করে বা দেখা করে তার খোঁজখবর নিন। ছোট একটি কাজই হতে পারে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।
- ৩. একটি মন্দ অভ্যাস ত্যাগ করুন: এই আয়াতের আলোকে নিজের জীবনের দিকে তাকান। অশ্লীলতা, মন্দ কাজ বা জুলুমের অন্তর্ভুক্ত হয়, এমন একটি ছোট অভ্যাস চিহ্নিত করুন এবং তা ত্যাগের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চান।
- ৪. অন্তরকে নরম করুন: প্রতিদিন কিছু সময় একান্তে কাটান। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, "হে আল্লাহ, আমার কঠিন অন্তরকে আপনার কালামের জন্য নরম করে দিন।"
উপসংহার: দিলের পরিশুদ্ধিই আসল চাবিকাঠি
মুফতি সাহেবের এই notun waz আমাদের জন্য এক বিরাট শিক্ষা। আকসাম বিন সাইফির ঘটনা প্রমাণ করে, আল্লাহর শক্তি অপরিসীম ও কালজয়ী। তবে সেই শক্তি অনুভব করার জন্য প্রয়োজন একটি প্রস্তুত, বিনয়ী ও বিশুদ্ধ অন্তর। কোরআন শুধু তেলাওয়াতের জন্য নয়, বরং এটি জীবন পরিচালনার জন্য এক পূর্ণাঙ্গ সংবিধান।
এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলে বন্ধু ও পরিবারের সাথে শেয়ার করে ইলম ছড়িয়ে দেওয়ার সওয়াবে অংশ নিন।
আসুন, আমরা আমাদের অন্তরকে দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত করে আল্লাহর ভালোবাসায় সিক্ত করার চেষ্টা করি। ইউটিউবে এই Famous islamic channel এ প্রচারিত এমন Bangla waz শুনে নিজেদের ঈমানকে তাজা করি এবং এই ছয়টি নীতির ওপর জীবনকে সাজিয়ে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার তৌফিক কামনা করি। আমিন।
মূল আলোচনাটি শুনুন (ভিডিও)
সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
প্রশ্ন ১: সূরা আন-নাহলের ৯০ নম্বর আয়াতটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: কারণ প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর মতে, এই একটি আয়াতেই আল্লাহ তা'আলা মানবজীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ভালো কাজের আদেশ এবং সকল মন্দ কাজের নিষেধকে একত্রিত করেছেন, যা একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার সারসংক্ষেপ।
প্রশ্ন ২: মুফতি আশেকে এলাহী কে?
উত্তর: মুফতি আশেকে এলাহী বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক, যিনি তার সাবলীল ও হৃদয়গ্রাহী আলোচনার মাধ্যমে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে, দ্বীনের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সুপরিচিত।
প্রশ্ন ৩: কোরআনের বাণী দিয়ে প্রভাবিত হওয়ার জন্য অন্তরকে কীভাবে প্রস্তুত করব?
উত্তর: আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠভাবে দোয়া করা, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা, নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত শোনা ও বোঝা এবং আলেমদের সান্নিধ্যে থেকে দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করার মাধ্যমে অন্তরকে প্রস্তুত করা যায়।
এক নজরে পুরো আলোচনা
-
অলৌকিক প্রভাব: রাসূল (ﷺ)-এর মুখে সূরা আন-নাহলের একটি মাত্র আয়াত শুনে আকসাম বিন সাইফি ও তার পুরো গোত্র ইসলাম গ্রহণ করে।
-
কেন্দ্রীয় আয়াত: সূরা আন-নাহলের ৯০ নম্বর আয়াত, যা কোরআনের অন্যতম সারগর্ভ আয়াত এবং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার সারসংক্ষেপ।
-
তিনটি ঐশী আদেশ: ন্যায়বিচার (আদল), সদাচরণ (ইহসান) এবং আত্মীয়ের হক আদায় করার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন।
-
তিনটি কঠোর নিষেধাজ্ঞা: অশ্লীলতা (ফাহশা), মন্দ কাজ (মুনকার) এবং জুলুম (বাগয়ি) থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
-
আমাদের জন্য শিক্ষা: দুনিয়ার মোহমুক্ত একটি বিশুদ্ধ ও নরম অন্তর ছাড়া কোরআনের প্রকৃত নূর ও প্রভাব অনুভব করা সম্ভব নয়।
-
আলোচক: মুফতি আশেকে এলাহী, যার সুমধুর কন্ঠে এই ঈমানজাগানিয়া ঘটনাটি আমাদের কাছে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।