মাগরিবের পর যে আমলে জীবন বদলে যায়: গুনাহ মাফ ও ১২ বছরের এবাদতের সওয়াব | মুফতি আবুল হাসান

মাগরিবের পর যে আমলে জীবন বদলে যায়: গুনাহ মাফ ও ১২ বছরের এবাদতের সওয়াব | মুফতি আবুল হাসান

ভূমিকা

প্রতিদিন সূর্যাস্তের সাথে সাথে যখন চারদিকে এক পবিত্র নীরবতা নেমে আসে, তখন মাগরিবের আজান আমাদের ব্যস্ত জীবনে এক স্বর্গীয় প্রশান্তি নিয়ে আসে। দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে মুমিন বান্দা যখন আল্লাহর দরবারে সিজদাহ দিয়ে ওঠে, তখন তার অন্তর থাকে নরম ও আল্লাহমুখী। এই মূল্যবান সময়টুকুকে আমরা কীভাবে আরও ফলপ্রসূ করতে পারি?

সম্প্রতি প্রখ্যাত আলেম এবং বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় বক্তা, মুফতি আবুল হাসান সাহেব জকিগঞ্জী-এর একটি মনোমুগ্ধকর bangla waz থেকে মাগরিবের পর আমল নিয়ে অমূল্য দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। তাঁর সেই আলোচনা, যা বহু মানুষের কাছে viral video আকারে পৌঁছেছে, সেখান থেকেই আজকের এই পোস্ট। চলুন, জীবন বদলে দেওয়া সেই আমলগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

১. মাগরিবের সুন্নতে বিশেষ দুই সূরা: জীবনের সগিরা গুনাহ মাফের এক অসাধারণ সুযোগ

আমরা প্রায় সকলেই মাগরিবের ফরজ নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা আদায় করি। এই সাধারণ আমলটির সাথে ছোট্ট একটি সংযোজন আমাদের জীবনের সমস্ত সগিরা গুনাহ মাফের কারণ হতে পারে।


  • আমল: মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরুন (কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন) এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস (কুল হুয়াল্লাহু আহাদ) পাঠ করা।

  • ফজিলত: হাদিসের আলোকে মুফতি আবুল হাসান বলেন, যে ব্যক্তি এই নিয়মটি অনুসরণ করে মাগরিবের সুন্নত আদায় করবেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর জীবনের সমস্ত সগিরা গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সুবহানাল্লাহ!)

নিজস্ব প্রতিফলন: আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কত ছোট ছোট গুনাহ হয়ে যায়। মাত্র দুটি নির্দিষ্ট সূরা পাঠের মতো একটি সহজ অভ্যাস আমাদেরকে এই গুনাহের বোঝা থেকে মুক্ত করতে পারে। এটি আল্লাহর রহমতের এক অনন্য নিদর্শন, যা আমাদের শেখায় যে ইবাদতের নিষ্ঠা সংখ্যার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

২. সালাতুল আউয়াবিন: মাত্র ছয় রাকাতে ১২ বছরের নফল ইবাদতের অবিশ্বাস্য সওয়াব!

Magriber namaz porar por amol হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত হলো ‘সালাতুল আউয়াবিন’। এই নামাজের সওয়াব এতটাই বিশাল যে তা প্রতিটি মুমিনের অন্তরকে আগ্রহী করে তুলবে।

  • আমল: মাগরিবের ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর দুই রাকাত করে মোট ছয় রাকাত নফল নামাজ আদায় করা।

  • ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন:

    مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ سِتَّ رَكَعَاتٍ لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيمَا بَيْنَهُنَّ بِسُوءٍ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً
    অনুবাদ: 'যে ব্যক্তি মাগরিবের পর (মন্দ কথা না বলে) ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে, তাকে বারো বছরের ইবাদতের সমান সওয়াব দেওয়া হয়।' [সুনানে তিরমিজি: ৪৩৫, ইবনে মাজাহ: ১৩৭৪]

বিষয়টিকে আরও সহজ করে মুফতি সাহেব তাঁর new waz-এ ব্যাখ্যা করেন, হানাফি মাযহাবের প্রখ্যাত ফকিহ মোল্লা আলী কারী (রহ.)-এর মতে, মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত নামাজকে এই ছয় রাকাতের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। অর্থাৎ, সুন্নতের পর আর মাত্র চার রাকাত পড়লেই এই বিশাল ফজিলতের অধিকারী হওয়া সম্ভব।



নিজস্ব প্রতিফলন: আজকের দ্রুতগতির জীবনে আমরা মাত্র ১০-১৫ মিনিট সময় বের করতে পারলেই ১২ বছরের নফল ইবাদতের মতো বিশাল সওয়াব অর্জন করতে পারি। এটি আমাদের জন্য একটি আধ্যাত্মিক বিনিয়োগ, যা দুনিয়ার যেকোনো বিনিয়োগের চেয়ে হাজার গুণে বেশি লাভজনক।

৩. দ্বীনি জ্ঞান প্রচার: সওয়াব অর্জনের শ্রেষ্ঠ মাল্টিপারপাস ব্যবসা ও সদকায়ে জারিয়া

islamic video বা ওয়াজ থেকে ভালো কিছু শেখার পর তা যদি অন্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়, তবে এর সওয়াব বহুগুণে বেড়ে যায়। কারণ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

الدَّالُّ عَلَى الْخَيْرِ كَفَاعِلِهِ
অনুবাদ: "ভালো কাজের পথ দেখানো ব্যক্তি সেই কাজ সম্পাদনকারীর মতোই (সওয়াব পায়)।"

আপনি যদি আজকের এই ইসলামিক গল্প বা আমলের কথাগুলো আপনার পরিবার বা বন্ধুদের সাথে আলোচনা করেন, কিংবা একটি islamic status হিসেবে শেয়ার করেন, আর তারা শুনে আমল শুরু করে, তাহলে তারা যে পরিমাণ সওয়াব পাবে, আপনিও ঠিক সেই পরিমাণ সওয়াবের অংশীদার হবেন—অথচ তাদের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। এটিই ইসলামের সবচেয়ে বড় 'মাল্টিপারপাস ব্যবসা', যেখানে কোনো লোকসান নেই

নিজস্ব প্রতিফলন: সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে একটি শেয়ার বা একটি মেসেজ হতে পারে আপনার জন্য সদকায়ে জারিয়ার মাধ্যম। আপনার শেয়ার করা একটি কথা যদি একজনের জীবনও বদলে দেয়, তার প্রতিদান আপনি পেতেই থাকবেন। আসুন, প্রযুক্তিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম বানাই।

৪. বিশেষ আকর্ষণ: রমজানের প্রস্তুতি এবং বরকতের দোয়া

আলোচনার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আসন্ন রমজানের প্রস্তুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। নবীজি (ﷺ) বলেছেন: “রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস।”



  • রজব মাস: ইবাদতের বীজ বপনের মাস।

  • শাবান মাস: সেই বীজে চোখের পানি ও ইস্তিগফারের পানি দিয়ে সেচ দেওয়ার মাস।

  • রমজান মাস: রহমতের ফসল ঘরে তোলার মাস।

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) রজব মাস থেকেই এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন:

اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
অনুবাদ: ‘হে আল্লাহ, আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দিন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’

৫. সূরা ইখলাসের বিস্ময়কর মর্যাদা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

কোরআনের অন্যতম ছোট সূরা হলো সূরা ইখলাস, যার ফজিলত অপরিসীম।

  • ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: islamic history থেকে জানা যায়, একবার মক্কার কাফিররা নবীজি (ﷺ)-এর কাছে আল্লাহর বংশ পরিচয় সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রশ্ন করেছিল। সেই কঠিন মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালা তাঁর একত্ববাদের পরিচয় দিয়ে সূরা ইখলাস নাজিল করেন।

  • ফজিলত: সাহাবী আবু যর গিফারী (রাঃ) অবসর পেলেই এই সূরাটি বেশি বেশি পাঠ করতেন। এর ফলে আসমানের ফেরেশতারা তাকে জমিনের মানুষের চেয়েও বেশি চিনতেন।


উপসংহার

মুফতি আবুল হাসান, যিনি একজন স্বনামধন্য bangladeshi bokta, তাঁর প্রাঞ্জল বাংলা এবং কখনো কখনো আবেগঘন সিলেটি ওয়াজ-এর মাধ্যমে আমাদের দ্বীনের পথে চলতে উৎসাহিত করেন। bd waz ও islamic videos থেকে প্রাপ্ত এই জ্ঞান আমাদের জীবনে অপার কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। আসুন, আমরা এই সহজ কিন্তু ফজিলতপূর্ণ আমলগুলোকে নিজেদের জীবনের অংশ করে নিই এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে যাই।


আজই শুরু করুন: আপনার করণীয় তালিকা

  • আজ মাগরিব থেকেই: সুন্নত নামাজের প্রথম রাকাতে সূরা কাফিরুন ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়ার চেষ্টা করুন।

  • সময় বের করুন: ব্যস্ততা সত্ত্বেও অন্তত সুন্নতসহ ছয় রাকাত (২+৪) সালাতুল আউয়াবিন পড়ার অভ্যাস করুন।

  • জ্ঞান ছড়িয়ে দিন: এই পোস্টের যেকোনো একটি তথ্য আপনার বন্ধু বা পরিবারের কারো সাথে শেয়ার করুন।

  • দোয়াকে অভ্যাসে পরিণত করুন: এখন থেকেই রজব ও শাবানের বরকতের দোয়াটি পাঠ করা শুরু করুন।


মূল আলোচনাটি ভিডিওতে শুনুন

আলোচনাটি আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে এবং সম্মানিত বক্তা মুফতি আবুল হাসান জকিগঞ্জী হুজুরের কণ্ঠে সরাসরি শুনতে নিচের ভিডিওটি দেখুন।

Video Thumbnail

সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

প্রশ্ন ১: আমি যদি সুন্নত নামাজে সূরা কাফিরুন বা ইখলাস পড়তে ভুলে যাই, আমার নামাজ কি হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, আপনার নামাজ হয়ে যাবে। এই সূরাগুলো পাঠ করা মুস্তাহাব (উত্তম), ফরজ বা ওয়াজিব নয়। তবে ফজিলত লাভের জন্য পড়ার চেষ্টা করা উচিত।

প্রশ্ন ২: সালাতুল আউয়াবিন কি এশার আগে পর্যন্ত পড়া যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, মাগরিবের পর থেকে এশার ওয়াক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নামাজ আদায় করা যায়। তবে মাগরিবের পরপরই আদায় করা উত্তম।

প্রশ্ন ৩: এই আমলগুলো কি নারীরাও করতে পারবে?
উত্তর: অবশ্যই। এই সমস্ত আমলের ফজিলত নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমান। নারীরা ঘরে নামাজ আদায় করেও এই সওয়াব অর্জন করতে পারবেন।


এক নজরে মাগরিবের পর আমল

🕌 মাগরিবের সুন্নত: ১ম রাকাতে সূরা কাফিরুন, ২য় রাকাতে সূরা ইখলাস।
ফজিলত: সকল সগিরা গুনাহ মাফ।
🕋 সালাতুল আউয়াবিন: মাগরিবের পর ৬ রাকাত নফল নামাজ।
ফজিলত: ১২ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব।
📢 জ্ঞান প্রচার: ইসলামিক জ্ঞান শেয়ার করা।
ফজিলত: আমলকারীর সমান সওয়াব (সদকায়ে জারিয়া)।

এমন আরও ইসলামিক আলোচনার ব্লগ পেতে আমাদের famousislamicc.com - Follow করুন এবং দ্বীনের পথে একে অপরকে সাহায্য করুন।


সম্পর্কিত আলোচনা পড়ুন

যে জিকিরের প্রভাবে দরজাও কেঁপে ওঠে আলৌকিক ঘটনা


আরও পড়ুন

আমাদের ফলো করে পাশে থাকুন

নতুন পোস্ট প্রকাশের সাথে সাথে আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন।

ফলো করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ

নবীনতর পূর্বতন