যে জিকিরের প্রভাবে দরজাও কেঁপে ওঠে: আল্লামা নুরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জীর ঈমানজাগানিয়া আলোচনা

যে জিকিরের প্রভাবে দরজাও কেঁপে ওঠে - আল্লামা নুরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জী


ভূমিকা

ইসলামিক আলোচনা বা waz bangla মুসলিম সমাজে কেবল জ্ঞান বিতরণের মাধ্যম নয়, এটি ঈমানকে সতেজ ও আমলকে প্রাণবন্ত করার এক শক্তিশালী আধ্যাত্মিক পাথেয়। সম্প্রতি প্রখ্যাত আলেম আল্লামা নুরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জ এর একটি বয়ান muslim media জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই new bangla waz মাহফিলে তিনি একদিকে যেমন কবর জিয়ারত নিয়ে প্রচলিত একটি বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়েছেন, তেমনি আল্লাহর প্রিয় অলিদের জীবনের এমন বিস্ময়কর কারামত বর্ণনা করেছেন, যা শুনে যেকোনো মুমিনের অন্তর কেঁপে উঠবে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস সুগভীর হবে।

কবর জিয়ারত নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান: হাদিসের সঠিক মর্মার্থ

আলোচনার শুরুতে মাওলানা নুরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেন। একদল মানুষ প্রায়ই কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করার বিরোধিতা করতে গিয়ে বুখারী শরীফের একটি হাদিস দলিল হিসেবে পেশ করেন।

দলিল হিসেবে উপস্থাপিত হাদিসটি হলো:

لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ: الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى

অনুবাদ: “(অধিক সওয়াবের আশায়) তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো মসজিদের দিকে সফর করা অনুচিত—মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী এবং মসজিদে আকসা।” (সহীহ বুখারী)

খান সাহেবের ওয়াজ থেকে আমরা জানতে পারি, এই হাদিসটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ, কিন্তু এর সম্পর্ক মসজিদের সাথে, কবরের সাথে নয়। হাদিসে ব্যবহৃত ‘মাসাজিদ’ শব্দটিই এর প্রমাণ। nurul islam khan অত্যন্ত সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, পৃথিবীর হাজারো মসজিদের মধ্যে এই তিনটি মসজিদের মর্যাদা ও সওয়াব যেহেতু অতুলনীয়ভাবে বেশি, তাই বিশেষভাবে সফরের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ইসলামের তিনটি পবিত্র মসজিদ

  • মসজিদে হারাম (মক্কা): এক রাকাতে এক লক্ষ রাকাতের সওয়াব।
  • মসজিদে নববী (মদিনা): এক রাকাতে পঞ্চাশ হাজার রাকাতের সওয়াব।
  • মসজিদে আকসা (জেরুজালেম): এক রাকাতে পাঁচশত রাকাতের সওয়াব।

সুতরাং, মসজিদের জন্য প্রযোজ্য একটি হাদিসকে কবরের ওপর আরোপ করা একটি মারাত্মক ভুল। বরং কবর জিয়ারতের বিষয়ে নবীজি (ﷺ) এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

কবর জিয়ারতের পক্ষে সুস্পষ্ট হাদিস:

كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ، فَزُورُوهَا

অনুবাদ: “আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে তোমরা তা জিয়ারত করো।” (সহীহ মুসলিম, তিরমিজি)

এই অনুমতি সারা দুনিয়ার সকল কবরের জন্য, যার মধ্যে নবী-রাসূল ও অলি-আউলিয়ার কবরও অন্তর্ভুক্ত। নবীজি (ﷺ) আরও বলেন, ‘যে আমার কবর জিয়ারত করবে, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে।’

নিজস্ব প্রতিফলন: আজকের সমাজে জ্ঞান স্বল্পতার কারণে আমরা অনেক বিষয়েই প্রান্তিকতায় ভুগি। এই আলোচনা আমাদের শেখায়, দ্বীনের প্রতিটি বিষয়কে তার সঠিক প্রেক্ষাপটে বোঝা কতটা জরুরি। অন্যের ব্যাখ্যা শোনার আগে মূল উৎস যাচাই করা এবং বিজ্ঞ আলেমদের শরণাপন্ন হওয়া আমাদের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বকে অটুট রাখতে পারে।

কুতবুল আলেম সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.): আল্লাহর অলিদের শান

এই islamic video বয়ানের সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী অংশজুড়ে ছিলেন কুতবুল আলেম সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)। তাঁর আধ্যাত্মিক উচ্চতা বোঝাতে গিয়ে nurul islam khan sunamganj কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরেন।

একবার মাদানী (রহ.) এর দরসে এক অপরিচিত, জীর্ণশীর্ণ পোশাকের লোক এসে তাঁরই বিছানো চাদরে ঘুমিয়ে পড়লেন। ছাত্ররা হতবাক, কারণ মাদানী (রহ.) দরসের মাঝে কখনো কথা বলতেন না। পরে তিনি ছাত্রদের জানান, "এই ব্যক্তি বাগদাদের একজন বড় কুতুব, যিনি ছয় মাসে মাত্র আধা ঘণ্টা ঘুমান। সেই ঘুমের সময় তাঁর আধ্যাত্মিক দায়িত্ব পালনের জন্য একজন যোগ্য ব্যক্তি খুঁজছিলেন। অবশেষে আমার কাছে এসে দায়িত্ব অর্পণ করে ঘুমিয়েছেন এবং ওই আধা ঘণ্টা তাঁর দায়িত্ব আমি পালন করেছি।" এই ঘটনা প্রমাণ করে allama nurul islam khan saheb যার কথা বলছিলেন, সেই মাদানী (রহ.) নিজেও আধ্যাত্মিক জগতের সর্বোচ্চ স্তরের একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

কুতবুল আলেম হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) এর কারামত

নিজস্ব প্রতিফলন: আমরা প্রায়ই মানুষের বাহ্যিক পোশাক ও চেহারা দেখে তাদের বিচার করি। এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, আল্লাহর প্রিয় বান্দারা সাধারণের বেশেই বিচরণ করতে পারেন। সত্যিকারের মর্যাদা আল্লাহর কাছে, মানুষের দেখানো সম্মানের মধ্যে নয়। এটি আমাদের বিনয়ী হতে এবং কাউকে ছোট করে না দেখতে শেখায়।

সেই রাতের অলৌকিক ঘটনা: ‘বলে দেব’ রহস্যের উন্মোচন

এই waz video এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও মূল ঘটনাটি ছিল এক বুড়ো লোকের। লোকটি মাদানী (রহ.)-কে দেখলেই বলত, “বলে দেব, বলে দেব।” আর এ কথা শোনার সাথে সাথেই মাদানী (রহ.) দৌড়ে এসে তাকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরতেন। বছরের পর বছর সেবা করেও যা বড় বড় শিষ্যরা পেতেন না, তা এই বুড়ো লোকটি এক কথাতেই পেয়ে যেত।

মাদানী (রহ.) এর ইন্তেকালের পর সেই রহস্য উন্মোচিত হয়। বুড়ো লোকটি একবার গভীর রাতে গঙ্গো শরীফের দিকে যাচ্ছিলেন। দূর থেকে দেখেন, সেখানকার একটি ঘরের দরজা জিকিরের তালে তালে লাফাচ্ছে! কাছে গিয়ে শোনেন, ঘরের ভেতর থেকে একজন জিকির করছেন আর তাঁর জিকিরের প্রভাবে জড় দরজাও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জিকির করছে। পরে তিনি দেখেন, সেই জিকিররত ব্যক্তি আর কেউ নন, স্বয়ং তাঁর পীর ও মুর্শীদ কুতবুল আলেম মাদানী (রহ.)।

মাদানী (রহ.) তাকে দেখে ফেলেন এবং এই ঘটনা কাউকে না বলার জন্য কসম করান। সেই থেকে বুড়ো লোকটি মাদানী (রহ.) এর সাথে বুক মেলানোর জন্য ভালোবাসার ছলে বলত, “বলে দেব,” আর মাদানী (রহ.) ভাবতেন তিনি হয়তো সেই রাতের কথা বলে দেবেন। তাই তাকে চুপ করানোর জন্য কাছে এসে পরম স্নেহে জড়িয়ে ধরতেন।

আমাদের জন্য করণীয়

এই ঈমানজাগানিয়া আলোচনা থেকে আমরা কেবল জ্ঞানই অর্জন করি না, বরং আমাদের জীবনে আমল করার জন্য কিছু সুস্পষ্ট নির্দেশনাও পাই:

  1. সঠিক জ্ঞান অর্জন করুন: কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নির্ভরযোগ্য আলেমদের কাছ থেকে জানুন এবং নিজে পড়াশোনা করুন। ভুল ব্যাখ্যা দ্বারা প্রভাবিত হবেন না।
  2. আল্লাহর অলিদের সম্মান করুন: আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জীবন থেকে শিক্ষা নিন। তাঁদেরকে ভালোবাসুন এবং তাঁদের দেখানো পথে চলার চেষ্টা করুন।
  3. নিজের জিকিরকে প্রাণবন্ত করুন: জিকির কেবল মুখের বুলি নয়, এটি অন্তরের আমল। এমনভাবে আল্লাহকে স্মরণ করুন যেন আপনার সমগ্র সত্তা তাঁর স্মরণে মগ্ন হয়ে যায়।
  4. বিনয়ী হোন: কখনো কারো বাহ্যিক অবস্থা দেখে তাকে বিচার করবেন না। আল্লাহর কাছে কে বেশি প্রিয়, তা একমাত্র তিনিই জানেন।

শেষ কথা: ঈমান ও আমলের পাথেয়

নুরুল ইসলাম খান সাহেব সুনামগঞ্জী-এর এই আলোচনা আমাদের শেখায় যে, দ্বীনের প্রতিটি বিষয়কে সঠিক প্রেক্ষাপটে বোঝা কতটা জরুরি। সাথে সাথে এটি আমাদের আল্লাহর নেক বান্দাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি করে এবং তাঁদের জীবনের সাধনা থেকে শিক্ষা নিতে অনুপ্রাণিত করে। তাঁদের ইবাদতের প্রভাব যে শুধু আত্মায় নয়, বরং পারিপার্শ্বিক জড় পদার্থের উপরেও পড়ে—এই ঘটনাটি তার এক জ্বলন্ত প্রমাণ।

এই ঈমানী আলোচনাটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন এবং অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন। এমন আরও জ্ঞানগর্ভ ও হৃদয়স্পর্শী কন্টেন্ট পেতে আমাদের সাইট ফলো করুন।

মূল আলোচনাটি ভিডিওতে শুনুন

আলোচনাটি আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে এবং সম্মানিত বক্তা আল্লামা নুরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জী হুজুরের বলিষ্ঠ কণ্ঠে সরাসরি শুনতে নিচের ভিডিওটি দেখুন।

                                                ভিডিওতে আলোচনাটি শুনুন

এক নজরে পুরো আলোচনা

⚖️
বিভ্রান্তি নিরসন: মসজিদের হাদিস কবরের জন্য নয়। কবর জিয়ারত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত ও সওয়াবের কাজ।
আল্লাহর অলিদের শান: বাহ্যিক রূপ নয়, অন্তরের তাকওয়াই মর্যাদার মাপকাঠি।
💓
জিকিরের শক্তি: আন্তরিক জিকিরের প্রভাবে জড় পদার্থও প্রভাবিত হতে পারে, যা ঈমানকে মজবুত করে।
📚
আমাদের শিক্ষা: সঠিক জ্ঞান অর্জন, অলিদের সম্মান এবং বিনয়ের সাথে আমল করা মুমিনের দায়িত্ব।

সাধারণ জিজ্ঞাসাসমূহ (FAQ Section):

প্রশ্ন ১: তাহলে কি কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে এক শহর থেকে অন্য শহরে সফর করা জায়েজ?
উত্তর: হ্যাঁ, কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ এবং এটি একটি ধার্মিক কাজ। যে হাদিসটিতে সফর করতে নিষেধ করা হয়েছে, তা কেবল মসজিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কবরের ক্ষেত্রে নয়।

প্রশ্ন ২: আল্লাহর অলিদের কি সত্যিই এমন কারামত থাকতে পারে যে জড়বস্তুও প্রভাবিত হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি সম্ভব। একে কারামত বলা হয়। নবী-রাসূলদের মাধ্যমে যা প্রকাশ পায় তা মু'জিজা, আর আল্লাহর অলিদের মাধ্যমে যা প্রকাশ পায় তা কারামত। পবিত্র কুরআনে আসহাবে কাহাফ ও মারিয়াম (আ.) এর ঘটনা এর প্রমাণ। আল্লাহর হুকুমে সবকিছুই সম্ভব।

প্রশ্ন ৩: আল্লাহর অলিদের সম্মান করা এবং তাঁদের কাছে সাহায্য চাওয়া কি শিরক?
উত্তর: আল্লাহর অলিদের সম্মান করা, ভালোবাসা এবং তাঁদের অনুসরণ করা ঈমানের অংশ। তবে কোনো অলি বা পীরকে সৃষ্টিকর্তার সমকক্ষ মনে করা, তাঁর কাছে এমন কিছু চাওয়া যা কেবল আল্লাহই দিতে পারেন (যেমন সন্তান, রিযিক), অথবা সরাসরি তাঁর ইবাদত করা স্পষ্ট শিরক। সম্মান ও শিরকের মধ্যে পার্থক্য বোঝা অত্যন্ত জরুরি। এই পোস্টে আলোচিত ঘটনাগুলো তাঁদের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা বাড়ায়, শিরকের দিকে আহ্বান করে না।

সম্পর্কিত আলোচনা পড়ুন

হাশরের মাঠের ৩টি মহাবিপদ সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

পোস্টটি পড়ুন

আমাদের ফলো করে পাশে থাকুন

নতুন পোস্ট প্রকাশের সাথে সাথে আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন।

ফলো করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ

নবীনতর পূর্বতন