
ভূমিকা
রাসূলে পাক (সাঃ) এর জীবন ছিল রহমতের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি শুধু বিশ্বাসীদের জন্যই নন, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা মুনাঈম খান আনসারী সাহেবের একটি সাম্প্রতিক new waz থেকে এমন একটি শিক্ষণীয় ঘটনা উঠে এসেছে, যা প্রতিটি muslim এর ঈমানকে নাড়া দিয়ে যাবে। এই islamic video টি আমাদের জীবনকে বদলে দেওয়ার পাথেয় হতে পারে।
ঈমানের আলোয় আলোকিত এক শিশুর বিদায়
এই waz mahfil -এ তিনি একটি অসাধারণ ঘটনা দিয়ে আলোচনা শুরু করেন। একদিন আল্লাহর নবী রাহমাতুল্লিল আলামিন (সাঃ) মদিনার রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় এক ইহুদির বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পান। তিনি এগিয়ে গিয়ে দেখেন, সেই ইহুদির এক শিশু সন্তান মরণাপন্ন অবস্থায় চোখ বন্ধ করে আছে এবং তার বাবা পাশে বসে তাওরাত তেলাওয়াত করছেন, যেন তার সন্তান তাওরাতের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়।
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যখন সেই ঘরে প্রবেশ করলেন, তাঁর কণ্ঠস্বর শুনেই মুমূর্ষু বাচ্চাটি চোখ খুলে তাকালো। নবীজি (সাঃ) তখন ইহুদিকে জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনি যে তওরাত তেলাওয়াত করছেন, তাতে কি আমি মোহাম্মদের (সাঃ) বর্ণনা আছে?"
ইহুদী লোকটি তখন অস্বীকার করলো, তখন সবাইকে অবাক করে দিয়ে তার মৃত্যুপথযাত্রী ছেলেই বলে উঠলো, "আছে!" শুধু তাই নয়, সে তার বাবাকে সাক্ষী রেখে বললো, "আব্বা, আপনি সাক্ষী থাকেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম এবং আল্লাহকে এক বলে স্বীকার করে নিলাম।"
এই কালিমা পাঠ করার কিছুক্ষণ পরেই শিশুটি মারা যায়। আল্লাহর নবী (সাঃ) এই ঘটনায় এত আনন্দিত হয়েছিলেন যে, তাঁর চেহারা মোবারক পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তিনি আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বলেন, "আমি মোহাম্মদ একটা মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে পারলাম, এর চাইতে খুশির সংবাদ আর কী হতে পারে?"
এই ঘটনাটি, যা অনেক bangla waz video -তে আলোচিত হয়েছে, তা আমাদের দেখায় নবীজির দয়া ও হেদায়েতের প্রতি তাঁর আকুতি কত গভীর ছিল।
হাদিসেও এমন ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
أَنَّ غُلاَمًا يَهُودِيًّا كَانَ يَخْدُمُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَمَرِضَ، فَأَتَاهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَعُودُهُ، فَقَعَدَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَقَالَ لَهُ " أَسْلِمْ ". فَنَظَرَ إِلَى أَبِيهِ وَهْوَ عِنْدَهُ فَقَالَ لَهُ أَطِعْ أَبَا الْقَاسِمِ صلى الله عليه وسلم. فَأَسْلَمَ، فَخَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ يَقُولُ " الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنْقَذَهُ مِنَ النَّارِ "
"একজন ইহুদি বালক নবী (সাঃ) এর খেদমত করত। সে অসুস্থ হলে নবী (সাঃ) তাকে দেখতে যান এবং তার মাথার কাছে বসে তাকে বলেন, ‘ইসলাম গ্রহণ করো।’ বালকটি তার পাশে থাকা বাবার দিকে তাকালে, তার বাবা বলেন, ‘আবুল কাসেম (সাঃ) এর কথা মেনে নাও।’ তখন সে ইসলাম গ্রহণ করে। নবী (সাঃ) সেখান থেকে বের হয়ে বলেন, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করেছেন।’" (সহীহ বুখারী, হাদিস নং: ১৩৫৬)
বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিফলন
এই ঘটনাটি আমাদের শেখায় যে, হেদায়েতের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো শ্রেণি, ধর্ম বা বয়সের ভেদাভেদ নেই। আজকের বিভক্ত পৃথিবীতে, অন্যের প্রতি করুণা ও ভালোবাসার মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরাই হতে পারে দাওয়াতি কাজের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। জোর করে নয়, বরং মায়া ও ভালোবাসা দিয়েই মানুষের অন্তর জয় করা সম্ভব।
সন্তানকে আলেম বানানোর দুইটি সহজ আমল
এই islamic waz এর আলোচনায় Mawlana Abdul Munim Khan Ansari সন্তানকে দ্বীনের আলেম বানানোর দুইটি গুরুত্বপূর্ণ আমলের কথা উল্লেখ করেছেন। আমাদের বংশধর থেকে দ্বীনের দায়ী তৈরি হোক, তা আমরা সকলেই চাই। এর জন্য দুইটি কাজ করতে হবে:

১. আলেমকে সম্মান দেওয়া
আলেমদের সম্মান করা মানে স্বয়ং নবীজির এলেমকে সম্মান করা। কারণ আলেমরা হলেন নবীদের উত্তরসূরি। রাসূল (সা.) বলেছেন:
إِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ
"নিশ্চয়ই আলেমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী।" (সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং: ২৬৮২)
তাঁদের দেখলে সালাম দেওয়া, তাঁদের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখা এবং তাঁদের থেকে অর্জিত জ্ঞানকে জীবনে কাজে লাগানোই প্রকৃত সম্মান।
২. আলেম ও তালেবে এলেমকে খাবার দেওয়া
দ্বীনের পথের পথিক, মাদ্রাসার ছাত্রদের আপ্যায়ন করানো এবং তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা একটি অত্যন্ত বরকতময় আমল। এই আমলের বরকতে আল্লাহ তাআলা আপনার বংশের মধ্যে আলেম তৈরি করে দিতে পারেন। এটি কেবল খাবার খাওয়ানো নয়, বরং দ্বীনি ইলম অর্জনের পথে একটি সহযোগিতা।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিফলন
আজকের দিনে আলেমদের সম্মান করা শুধু তাদের ব্যক্তিগত সেবা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং তাদের জ্ঞানকে মূল্যায়ন করা, ফিতনার যুগে তাদের দিকনির্দেশনা গ্রহণ করা এবং তাদের পরিচালিত দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিকভাবে সমর্থন করাও সম্মানের অংশ। একটি ভালো বই কিনে আলেমকে হাদিয়া দেওয়া বা মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য শিক্ষাসামগ্রী কিনে দেওয়াও এই আমলের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
মূল আলোচনাটি ভিডিওতে শুনুন
নবীজি (সাঃ) এর নির্দেশিত তিনটি অপরিহার্য শিক্ষা
Munaim Khan Ansari তার আলোচনায় আরও বলেন, নবীজি (সাঃ) আমাদের সন্তানদের তিনটি জিনিস শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যা তাদের চরিত্র গঠন এবং ঈমানের ভিত্তি মজবুত করবে। রাসূল (সা.) বলেন:
أَدِّبُوا أَوْلادَكُمْ عَلَى ثَلاثِ خِصَالٍ : حُبِّ نَبِيِّكُمْ ، وَحُبِّ أَهْلِ بَيْتِهِ ، وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ
"তোমরা তোমাদের সন্তানদের তিনটি বিষয়ে শিক্ষা দাও: তোমাদের নবীর প্রতি ভালোবাসা, তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি ভালোবাসা এবং কুরআন তেলাওয়াত।" (আল-জামি' আল-সগীর, হাদিস নং: ৩১১)
- নবীজির মহব্বত ও ভালোবাসা: সন্তানদের হৃদয়ে নবীপ্রেম জাগিয়ে তোলা। তাঁর জীবন, তাঁর ত্যাগ এবং উম্মতের জন্য তাঁর ভালোবাসার গল্প শোনানো।
- নবীজির আহলে বাইত বা পরিবারের প্রতি ভালোবাসা: নবীজির পরিবারবর্গের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা শিক্ষা দেওয়া।
- কোরআন তেলাওয়াত ও কোরআনের প্রতি আন্তরিক মহব্বত: সন্তানদের কোরআনের সাথে এমন সম্পর্ক তৈরি করে দেওয়া, যেন তারা ভালোবেসে কোরআন পাঠ করে এবং এর অর্থ বোঝার চেষ্টা করে।
এই islamic video -টি থেকে আমরা জানতে পারি, জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি সন্তানদের দ্বীনি শিক্ষা প্রদান করা কতটা জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুনাঈম খান আনসারী সাহেবের এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করার এবং নিজেদের জীবনে তা বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিফলন
ডিজিটাল যুগে যেখানে নানা ধরনের কনটেন্ট শিশুদের মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে, সেখানে নবী (সা.) ও তাঁর পরিবারের ভালোবাসার গল্পগুলো আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ইসলামিক কার্টুন, শিক্ষণীয় ভিডিও এবং গল্পের বইয়ের মাধ্যমে এই ভালোবাসা তাদের অন্তরে গেঁথে দেওয়া যেতে পারে। একইভাবে, শিশুদের জন্য তৈরি বিভিন্ন কুরআন অ্যাপ ব্যবহার করে কোরআনের প্রতি তাদের আকর্ষণ বাড়ানো সম্ভব।
একনজরে আজকের আলোচনার সারমর্ম
- ✨হেদায়েতের আলো: আল্লাহর রহমতে মৃত্যুর পূর্বেও একজন অমুসলিম ঈমানের নূর লাভ করতে পারে।
- ❤️নবীজির দয়া: রাসূল (সা.)-এর করুণা ও ভালোবাসা ছিল সমগ্র মানবজাতির জন্য, যা অমুসলিমদেরও অন্তর জয় করত।
- 👨🎓আলেমের মর্যাদা: আলেমদের সম্মান ও সেবা করার মাধ্যমে আল্লাহ বংশে দ্বীনের জ্ঞানী ব্যক্তি তৈরি করেন।
- 👨👩👧👦সন্তানের প্রতি দায়িত্ব: সন্তানদের তিনটি অপরিহার্য শিক্ষা হলো—নবীপ্রেম, তাঁর পরিবারের প্রতি ভালোবাসা এবং কোরআনের সাথে সম্পর্ক।
- 📖দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব: দুনিয়াবি শিক্ষার পাশাপাশি পরকালীন মুক্তির জন্য সন্তানদের দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া অত্যাবশ্যক।
আপনার জন্য করণীয়
- নবীজির জীবনী পড়ুন: আজই আপনার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নবী (সাঃ) এর জীবনের কোনো একটি ঘটনা পড়ুন বা শুনুন।
- আলেমদের সমর্থন করুন: আপনার এলাকার কোনো আলেম বা মাদ্রাসার ছাত্রের খোঁজ নিন এবং সাধ্যমতো তাদের সাহায্য করুন, হোক তা আর্থিকভাবে বা অন্য কোনো উপায়ে।
- কোরআনের জন্য সময় দিন: প্রতিদিন পরিবারের সবাই মিলে অন্তত একটি আয়াত হলেও অর্থসহ তেলাওয়াত করার অভ্যাস করুন।
- ভালোবাসা প্রকাশ করুন: সন্তানদের সামনে নবী (সাঃ) ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের কথা শ্রদ্ধার সাথে আলোচনা করুন এবং তাদের প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করুন।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
প্রশ্ন ১: অমুসলিমদের অসুস্থতায় দেখতে যাওয়া কি ইসলামের অংশ?
উত্তর: হ্যাঁ, অমুসলিম প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যবহার করা, বিশেষ করে অসুস্থ হলে তাদের দেখতে যাওয়া ইসলামের সুন্দরতম শিক্ষার একটি অংশ এবং এটি নবী (সাঃ) এর সুন্নত, যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
প্রশ্ন ২: কীভাবে আলেমদের সঠিকভাবে সম্মান করা যায়?
উত্তর: তাদের জ্ঞানকে মূল্যায়ন করা, তাদের থেকে শিখতে চাওয়া, তাদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ না করা, তাদের গীবত না করা এবং দ্বীনের কাজে তাদের পাশে দাঁড়ানোই হলো প্রকৃত সম্মান।
প্রশ্ন ৩: সন্তানদের কোরআন শেখানোর সবচেয়ে ভালো বয়স কোনটি?
উত্তর: শৈশবকালই হলো কোরআন শিক্ষার উত্তম সময়, যখন শিশুদের মন স্বচ্ছ থাকে এবং তারা সহজে শিখতে পারে। তবে কোরআন শেখার কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই; যেকোনো বয়সেই এটি শুরু করা যায়।
প্রশ্ন ৪: মাওলানা মুনাঈম খান আনসারীর এমন আলোচনা আরও কোথায় পাওয়া যাবে?
উত্তর: ইউটিউবে "Munaim Khan Ansari new waz" বা "মুনাঈম খান আনসারী" লিখে সার্চ করলে তার অনেক Islamic waz এবং বিভিন্ন মাহফিলের আলোচনা খুঁজে পাওয়া যাবে।