এক প্রশংসার প্রতিদান ১০ দুনিয়ার সমান? ইউসুফ (আঃ) এর এক বিস্ময়কর ঘটনা | মাওলানা জালাল উদ্দিন সাহেব, কাকুরী


আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, ‘সুবহানাল্লাহ’—এই ছোট্ট প্রশংসার প্রতিদান আল্লাহ্‌র কাছে কত বিশাল? চলুন, হযরত ইউসুফ (আঃ) এর জীবন থেকে সেই শিক্ষা নিই।

ভূমিকা: এক শিশুর সাক্ষ্য ও আল্লাহর মহিমা

আমরা প্রতিদিন কতবার আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি? রুকুতে, সিজদায়, প্রতিটি তাসবিতে আমরা বলি ‘সুবহানাল্লাহ’। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, এই ছোট্ট প্রশংসার প্রতিদান আল্লাহ্‌র কাছে কত বিশাল? জনপ্রিয় ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা জালাল উদ্দিন সাহেব, কাকুরী তাঁর এক অনবদ্য আলোচনায় হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর জীবনের এমনই এক শিক্ষণীয় ঘটনা তুলে ধরেছেন, যা আল্লাহর প্রশংসার প্রকৃত মূল্য আমাদের শিখিয়ে দেবে এবং ঈমানকে সতেজ করে তুলবে।

সেই সাক্ষীর প্রতিদান: একজন নবীর কৃতজ্ঞতা

যখন জুলেখার ষড়যন্ত্রের কারণে হযরত ইউসুফ (আঃ) এর পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তখন দোলনায় থাকা এক শিশু তাঁর নির্দোষ হওয়ার সাক্ষী দেয়। ঘটনার বহু বছর পর, যখন তিনি মিশরের আজিজ, তখন সেই সাক্ষ্যদানকারী যুবক তাঁর সামনে উপস্থিত হয়ে বলেন, "হে আল্লাহর নবী! আমিই সেই দোলনার শিশু, যে আপনার পবিত্রতার সাক্ষ্য দিয়েছিল।"

এক প্রশংসার প্রতিদান ১০ দুনিয়ার সমান

এই কথা শোনার সাথে সাথে হযরত ইউসুফ (আঃ) এর চেহারা আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তিনি এতটাই খুশি হন যে, তৎক্ষণাৎ খাদেমকে ডেকে যুবকটিকে ১০০ 'ইরদাব' (প্রায় ১০৫ মণ) গম উপহার দেওয়ার নির্দেশ দেন।

আল্লাহর একটি ভালোবাসার বার্তা: প্রশংসার অবিশ্বাস্য প্রতিদান

এই ঘটনার পর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে ইউসুফ (আঃ)-কে এক ভালোবাসার বার্তা পাঠান। তিনি বলেন: "হে ইউসুফ! তোমার পবিত্রতার একটি সাক্ষী পেয়ে তুমি এত খুশি হয়ে তাকে এতকিছু দান করলে! আর আমার বান্দারা তো সকাল-সন্ধ্যা, রুকু-সিজদায় কত শতবার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে আমার পবিত্রতা বর্ণনা করে। আমি আমার বান্দার প্রশংসায় খুশি হয়ে এর প্রতিদানে পরকালে তাকে এই দুনিয়ার তুলনায় দশটি দুনিয়ার সমান জান্নাত দান করব।" (সুবহানাল্লাহ!)

সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর মর্যাদা

এক নবীর পবিত্রতার প্রশংসায় যদি এত বড় প্রতিদান থাকে, তাহলে যিনি তামাম পৃথিবীর জন্য পবিত্রতার চূড়ান্ত বার্তা নিয়ে এসেছেন, সেই আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ)-এর মর্যাদা কতটা? আল্লাহ তাঁকে দান করেছেন ‘আল-কাউসার’, যার অর্থ প্রাচুর্য বা বিপুল কল্যাণ। মাওলানা জালাল উদ্দিন সাহেব এর কয়েকটি বিশেষ ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন:

  • অগণিত উম্মত: নূহ (আ) ৯৫০ বছর হায়াত পেয়েও মাত্র ৮০ জন উম্মত পেয়েছিলেন। সেখানে আমাদের নবীজি (ﷺ) মাত্র ২৩ বছরের জীবনে এমন অসংখ্য উম্মত লাভ করেছেন, যা অন্য কোনো নবীর ভাগ্যে জোটেনি।
  • বিশেষ প্রভাব: আল্লাহ তায়ালা নবীজি (ﷺ)-কে এমন এক বিশেষ প্রভাব ও সম্মান দান করেছেন, যা অন্য কোনো নবীকে দেননি।
  • আল-কুরআন: আল্লাহ তায়ালা নবীজি (ﷺ)-কে এমন এক অনন্য কালাম দান করেছেন, যার ভেতরে পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানি কিতাবের সারমর্ম ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
  • সাহাবীদের জামাত: আল্লাহ তায়ালা নবীজি (ﷺ)-কে সাহাবীদের এক বিশাল জামাত দান করেছেন, যা অন্য কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি।
নবী মুহাম্মদ (ﷺ) এর মর্যাদা

ঈমান রক্ষার সতর্কবার্তা: মাজার ও শিরক থেকে সাবধান!

আলোচনার শেষে বক্তা তাওহীদ বা একত্ববাদের শিক্ষাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য কিছু প্রচলিত ভুল সম্পর্কে আমাদের কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, এমন গান গাওয়া বা বিশ্বাস করা যাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে প্রয়োজন পূরণকারী মনে করা হয় (যেমন: "বাবা তোমার দরবারে কেউ ফেরে না খালি হাতে"), তা ঈমান নষ্ট করে দেয়। তিনি আরও বলেন, মাজারে মান্নত করা একটি কুফরি কাজ। কারণ চাওয়ার, সিজদা করার এবং মান্নত করার একমাত্র জায়গা হলো আরশ আজিমের মালিক মহান আল্লাহর দরবার।

মূল আলোচনাটি শুনুন (ভিডিও)

উপসংহার

এই আলোচনা থেকে আমাদের জন্য মূল শিক্ষা হলো—আল্লাহর প্রশংসার গুরুত্ব অনুধাবন করা, আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ)-এর অতুলনীয় মর্যাদা সম্পর্কে জানা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের ঈমানকে শিরকের মতো ভয়াবহ পাপ থেকে সুরক্ষিত রাখা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং তাঁর নেককার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।

এই শিক্ষণীয় islamic video-টি দেখুন এবং সম্পর্কিত আরেকটি ব্লগ পড়ুন:
জান্নাতি সাহাবীর গোপন আমল

আমাদের ফলো করে পাশে থাকুন

নতুন পোস্ট প্রকাশের সাথে সাথে আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন।

ফলো করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ

নবীনতর পূর্বতন